চবি ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় চারজনের দোষ স্বীকার : র্যাব
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার চার আসামি। তবে ভিডিও ডিলেট করে দিয়েছে অভিযুক্ত আসামি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন ছাত্রলীগকর্মী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী। রুবেলে সঙ্গে তারা ক্যাস্পাসে দাপিয়ে বেড়াতো। রুবেলে সঙ্গে একাধিক ছবিতে আসামিদের দেখাও গেছে।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে র্যাব-৭ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ। র্যাব-৭ এর অধিনায়ক জানান, ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেটও উদ্ধার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চবির ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আজিম (২৩), চবির নৃবিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নুরুল আবছার ওরফে বাবু, হাটহাজারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নুর হোসেন ওরফে শাওন (২২) এবং হাটহাজারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ (২২)।
আজিমের বাড়ি নোয়াখালির হাতিয়া উপজেলায়, শাওনের হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নে, আবছারের ফেনীর পরশুরামে ও মাসুদের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলায়। নুরুল আফসার বলেন, ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুর কাছ থেকে দুটি মোবাইল সেট ও নগদ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী বাদী হয়ে গত ২০ জুলাই হাটহাজারী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ আরও জানান, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা র্যাবের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তারা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণের তথ্যও স্বীকার করেছেন। আটক চারজনকে হাটহাজারী থানায় সোপর্দ করা হবে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক আরও বলেন, ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় মামলার পর থেকেই ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তদন্ত পর্যায়ে একজনকে আসামিকে আটকের পর বাকিদের তথ্য পাওয়া যায়। পরে চারজনকে আটক করা সম্ভব হয়। অন্য দুজন পলাতক। তাদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আসামিদের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ভিডিও ধারণের তথ্য স্বীকার করেছে। তবে এই ঘটনায় মামলার পরপরই ভিডিও ডিলেট করে দিয়েছে। এখন মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে হবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আটককৃতদের মধ্যে দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অন্য দুজন হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থী। কিন্তু তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকে এবং স্থানীয় হওয়ার সুবাদে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। আজিম নিজেই ভিডিও ধারণের তথ্য স্বীকার করেছে। তবে তারা ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য স্বীকার করলেও পদ-পদবী নেই বলে দাবি করেছে।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার রাতে হাটহাজারী ও রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গ্রেপ্তারদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
১৭ জুলাই রাতে চবির এক ছাত্রী পাঁচজন দুর্বৃত্তের হাতে শারীরিক হেনস্তার শিকার হন। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা বন্ধুকেও মারধর ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিলে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলাও করেছেন ওই ছাত্রী। জড়িতদের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে চবি ক্যাম্পাস।