চমেকের ১৫৬ চিকিৎসককে একযোগে বদলিতে অসন্তোষ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) থেকে ১৫৬ জন চিকিৎসককে একযোগে বদলি করা হয়েছে। এই চিকিৎসকদের একটি বড় অংশকে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পদায়ন করে আগামীকাল বুধবারের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষক, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পাশাপাশি এ বদলির ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকনেতারা। অবিলম্বে চিকিৎসকদের গণবদলির ঘটনা পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তারা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫৬ চিকিৎসককে একযোগে বদলির আদেশ দিয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জন চিকিৎসককে চমেক থেকে ফেনী জেলায়, ১৮ জনকে খাগড়াছড়িতে, ৬০ জনকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে, ১৬ জনকে চমেক থেকে বিআইডিআইডিতে, আটজনকে ফটিকছড়ি উপজেলায় বদলি করা হয়। গতকাল সোমবার জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোভিড ১৯ অতিমারী মোকাবিলাসহ জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষে এসব চিকিৎসককে সংযুক্তি করা হয়েছে। আগামীকাল ৭ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ারও নির্দেশ এবং ৮ জুলাই পূর্বাহ্নে বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন। বদলিকৃতদের নতুন কর্মস্থলের মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি, ফেনী, ফটিকছড়ি, দাগনভুঁইয়া।
এ ঘটনাকে অপরিণামদর্শী মন্তব্য করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকনেতারা। বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজারের বেশি রোগী আসে। এখানে করোনার চাইতে সাধারণ রোগীর সংখ্যা বেশি। বদলি করা হয়েছে চমেকের যিনি পিসিআর ল্যাবের প্রধানসহ ছয়জনকে। ডেন্টাল সার্জনকে দেওয়া হয়েছে কোভিডের চিকিৎসা করতে। এনাটমি শিক্ষক যিনি ক্লিনিক্যাল বিষয় পড়ান, তাকে কোভিড চিকিৎসায়। নিওরোসার্জারি ও অর্থোপেডিক বিভাগে বেশি রোগী থাকে। এ বিভাগে মাত্র তিনজন চিকিৎসক আছেন। রোগী ২০০-এর বেশি। এ রকম অপরিকল্পিতভাবে একযোগে কোনো রকমের মাঠ পর্যায়ের আলোচনা ছাড়াই অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের বদলিতে চমেক হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’
পাশাপাশি একযোগে এত চিকিৎসক বদলিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার চেষ্টা চলছে বলে জানান কলেজ অধ্যক্ষ ডা. শাহানারা বেগম। অধ্যক্ষ ডা. শাহানারা বেগম বলেন, ‘এ পদায়নে আমাদের অসুবিধা হয়েছে। আমাদের কলেজে মাইক্রোবয়োলজি ল্যাব, পিসিআর ল্যাবের প্রধানসহ বেশিরভাগ শিক্ষককে পদায়নের বদলি করা হয়েছে। এক বছর ধরে যেখানে অনলাইনে বেসিক বিষয়ে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন, তা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা ছাত্রদের পড়াই। পাশাপাশি হাসপাতালে কাজ করি। এদের বেশির ভাগ পদায়ন হয়ে যাওয়ায় আমাদের সমস্যা বেড়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি যেন সমম্বয় করে পদায়ন করা হয়।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাইনি। তিনি বলেন, ‘আমি হাত জোড় করে মাফ চাইতেছি। এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না।’