চারটি জাহাজে আরো ১৭৭৮ জন রোহিঙ্গাকে নেওয়া হচ্ছে ভাসানচরে
তৃতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে আরো এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বোট ক্লাব থেকে চারটি জাহাজে করে তাদের ভাসানচরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন শিবির থেকে ৩৫টি বাসে করে চট্টগ্রামে আনা হয় এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গাকে। পতেঙ্গায় বিএফ শাহীন কলেজ মাঠ, বোট ক্লাব ও আশপাশের এলাকায় অস্থায়ী ট্রানজিট শিবিরে তাদের রাখা হয়। আজ শুক্রবার সকালে নৌবাহিনীর চারটি বিশেষ জাহাজে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ভাসানচরে।
কামাল নামের এক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, তিনি নিজের ইচ্ছাতেই ভাসানচরে যাচ্ছেন। তবে তিনি নিজের দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান। আর এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সহায়তা চান তিনি।
মো. এনামুল হক নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের কোথাও থাকার জায়গা নেই। সরকার বলছে, ভাসানচর ভালো হবে, তাই চলে যাচ্ছি।’
রাশেদা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা জানান, তিনি স্বামী হারা। সন্তানদের নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে একটু ভালোভাবে থাকার আশায় ভাসানচর যাচ্ছেন।
নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে যেসব রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ অন্তত এক মাসের রসদ সরকার মজুদ রেখেছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন নৃশংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় দেশটি থেকে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসে। মাঝে দুই দফায় রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া সফল হয়নি। মূলত মিয়ানমার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বহুদিন ধরেই কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে তারা বসবাস করে আসছেন। সেখানে চাপ কমানোর জন্য আপাতত সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, শুরুতে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে।
নৌবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মোজাম্মেল হক জানান, ভাসানচর আর দ্বীপ না। এটি একটি উন্নত এলাকায় পরিণত করা হয়েছে। সেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করছে নৌবাহিনী।
এর আগে দুই দফায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে স্থানান্তর করা হয় ভাসানচরে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে এক হাজার ৪৪০টি ক্লাস্টার হাউস ও ১২০টি শেল্টার স্টেশন। গুচ্ছ গ্রামের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে এসব ক্লাস্টার হাউস। প্রতিটি ক্লাস্টার হাউসে ১২টি ঘর। প্রতি ঘরে রয়েছে ১৬টি কক্ষ। একেক কক্ষে চারজনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের তুলনায় ভাসানচরে অনেক ভালো প্রাকৃতিক ও নান্দনিক পরিবেশে বসবাস করতে পারবেন বলে নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন।