চার জেলায় বজ্রপাতে ১৬ জন নিহত
নেত্রকোনা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে পৃথক পৃথক বজ্রপাতে ১৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১১ জন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির সময় এসব ঘটনা ঘটে।
ঢাকার বাইরে এনটিভির প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ভজন দাস, নেত্রকোনা : নেত্রকোনার কেন্দুয়া, মদন, খালিয়াজুরী ও পূর্বধলা উপজেলায় পৃথক পৃথক স্থানে বজ্রপাতে আটজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছে। আজ বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি চলাকালে বজ্রপাতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে দুজন কেন্দুয়া উপজেলার বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে কৃষক ফজলু মিয়া (৫৫) উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের কুণ্ডুলী গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে এবং কৃষক বায়েজিদ মিয়া (৪২) পাইকুড়া ইউনিয়নের বৈরাটি গ্রামের আসন খানের ছেলে।
কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ কায়সার ও পাইকুড়া ইউপির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাড়ির পাশে সবজি ক্ষেতে কাজ করছিলেন কুণ্ডুলী গ্রামের কৃষক ফজলু মিয়া। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অপরদিকে একই সময় বৈরাটি গ্রামের কৃষক বায়েজিদ মিয়া বাড়ির পাশের হাওরে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছেন। এসব ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি অপমৃত্যুর মামলা হবে বলেও জানান ওসি।
এদিকে জেলার মদন উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আবদুল মন্নাফের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র আতাবুর (২১) ও একই গ্রামের আবদুল কাদিরের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র শরিফ (১৮) বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন চারজন। আহতদের মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহতরা হলেন ফতেপুর গ্রামের মুসা মিয়ার ছেলে রবিন (১৫), চন্দন মিয়ার স্ত্রী সুরমা (২২), হিরন মিয়ার ছেলে রোমান (১৮) ও বাস্তা গ্রামের ভিক্ষু মিয়ার স্ত্রী করুনা (৪৫)।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বজ্রপাতে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। নিহতদের লাশ দাফন এবং আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করা হবে।
অপরদিকে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পুটিয়ার খালে মাছ ধরতে গিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় বজ্রপাতে আরও পাঁচজন আহত হয়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহত ব্যক্তিরা হচ্ছেন উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাতুয়াইল গ্রামের মৃত খেলু মিয়ার ছেলে অছেক মিয়া (৩৫), মৃত আমির মিয়ার ছেলে বিপুল মিয়া (৩২) ও মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মনজুরুল হকের ছেলে মনির হোসেন (২৮)।
আহতরা হলেন গাজীপুর ইউনিয়নের বাতুয়াইল কান্দাপাড়ার মামুন মিয়া (৩২), জয়াদ মিয়া (৪৩), আতিকুল (৩২), শফিকুল (৩০) ও আবুল মিয়া (৩৭)।
খালিয়াজুরীর ইউএনও এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর ইউনিয়নের পুটিয়ার খালে মাছ ধরতে গিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়। এ সময় বজ্রপাতে আরও পাঁচজন আহত হন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শিবিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেলে বৃষ্টিপাত চলাকালে পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পালগী গ্রামে হঠাৎ বজ্রপাতে ইছাক ফকিরের ছেলে স্কুলছাত্র জুনায়েদ (১১) ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক কাজী মো. আব্দুর রহমান বলেন, জেলার তিন উপজেলায় বয়ে যাওয়া ঝড় ও বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে আটজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি এবং আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের ১৫ হাজার এবং আহতদের তিন হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর : ফরিদপুরে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থকে ৫টার মধ্যে পৌরসভার পশ্চিম গঙ্গাবর্দী, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায়, সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ও মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লার কৃষক কাবুল শেখের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০), পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গঙ্গাবর্দী মহল্লার গোপাল মোল্লার ছেলে কবির মোল্লা (৪৮), সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কৃষক দুলাল খান (৫৮) ও মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরের কবির শেখ (৪০)।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন জানান, আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায় বজ্রপাতে আনোয়ারা বেগম নামের এক নারী মারা যান। ঘটনার সময় ওই নারী স্বামী ও ছেলের সঙ্গে মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এর আগে বিকেল ৪টার দিকে বজ্রপাতে পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গঙ্গাবর্দী মহল্লার কৃষক কবির মোল্লা মারা যান। তিনি ধান নিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মারা যান।
এ ছাড়া বিকেলে বজ্রপাতে সদর উপজেলার দুলাল খান নামের এক কৃষক এবং মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরের কবির শেখ নামের এক কৃষক মাঠে পাটক্ষেত পরিচর্যার কাজ করার সময় মারা যান।
আহমেদ সাব্বির সোহেল, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে বজ্রপাতে দুইজন মারা গেছে। আহত হয়েছে দুইজন। মঙ্গলবার বিকেলে পৃথক দুটি স্থানে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের কৃষিশ্রমিক আজমত আলী (৫০) ও সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামের স্কুলশিক্ষার্থী আসিফ মোল্লা (১৬)। আহতদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের শেখ মাঈনুদ্দিনের ছেলে কৃষিশ্রমিক আজমত আলী (৫০) পৌর এলাকায় পৌলি গ্রামে আবদুল হকের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। বিকেলে ক্ষেত থেকে ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে তিনি আবদুল হকের বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তাঁর ওপর বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
অপর দিকে সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামে মাসুদ মোল্লার ছেলে স্থানীয় রাকিব আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফ ও তার কয়েকজন বন্ধু ঘুড়ি উড়ানোর জন্য খোলা মাঠে যায়। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই আসিফ মোল্লা মারা যায়। সেইসঙ্গে বজ্রপাতে আহত হয় আসিফের বন্ধু আব্দুল্লাহ ও অনিক। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অনিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আব্দুল্লাহকে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মারুফ আহমেদ, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের নিকলী ও বাজিতপুরে বজ্রপাতের ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে নিকলীর গুরুই ইউনিয়নের বেতিনোয়াগাও গ্রামের কিশোর আরিফুল ইসলাম (১৭) বৃষ্টির মধ্যে হাওরে গরু আনতে গিয়ে হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। এলাকাবাসী উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সামছুল আলম সিদ্দিকী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহত আরিফুল বেতিনোয়াগাও গ্রামের মিয়া চাঁনের ছেলে।
অপরদিকে, বিকেলে একই সময় বাজিতপুর উপজেলার দিঘীরপাড়ে বজ্রপাতে সর্দার মিয়া (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।