চার বছরের গবেষণায় ‘মাদকবিজ্ঞানী’র আবিষ্কার উচ্চবিত্তদের মাদক ‘কুশ’
নাম ওনাইসি সাঈদ ওরফে রেয়ার সাঈদ (৩৮)। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে যান। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিতেন। এভাবে বিভিন্ন ধরনের মাদক সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। এক সময় তিনি ভাবতে থাকেন, বিভিন্ন ধরনের মাদক মোডিফাই করে নতুন মাদক তৈরি করবেন।
এক পর্যায়ে শুরু করেন মাদক নিয়ে গবেষণা। আর এভাবে রেয়ার সাঈদ তৈরি করেন কুশ নামের একটি মাদক। যে মাদক তিনি রাজধানীর উচ্চবিত্তদের কাছে দিতেন। তার আশা ছিল, এক সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুশ মাদক রপ্তানি করবেন। তিনি মাদকবিজ্ঞানীও হতে চেয়েছিলেন বলে দাবি র্যাবের।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈনের দাবি, সাঈদ নিজে মাদক গ্রহণ করতেন না। কিন্তু, মাদক নিয়ে গবেষণা করতেন। তার উদ্দেশ্য ছিল- তিনি মাদকের ওপর গবেষণা করে বিজ্ঞানী হবেন। চার বছর ধরে কুশ মাদক নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। সর্বশেষ ঢাকার মোহাম্মদপুরে কুশ এর চাষ শুরু করেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, এখান থেকে উৎপাদিত একটি চালান পাচার করার সময় ধরা পড়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ৪০০ গ্রাম। সাঈদের উৎপাদিত কুশ মাদক একবার বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি ১০০ গ্রাম কুশ বিক্রি করতেন ৩ লাখ টাকায়।
খন্দকার আল মঈন জানান, গতকাল সোমবার দিনগত রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে রেয়ার সাঈদকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় উদ্ধার করা হয় ১০১ গ্রাম কুশ, ৬ গ্রাম হেম্প, ০.০৫ গ্রাম মলি, ১ গ্রাম ফেন্টানল, ১৮ গ্রাম কোকেন, ১২৩ পিচ এক্সট্যাসি, ২৮ পিচ এডারল ট্যাবলেট এবং ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সাঈদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্ট এর মাধ্যমে অভিনব পন্থায় বিদেশি প্রজাতির কুশ তৈরির প্লান্ট ও সেটআপ জব্দ করা হয়। এটি ছিল সাঈদের গবেষণাগার ও কুশ উৎপাদনের কারখানা।
কমান্ডার মঈন বলেন, ওনাইসী সাঈদ বাংলাদেশে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকা থেকে বিবিএ এবং এমবিএ সম্পন্ন করেন। সেখানে অধ্যয়ন শেষে ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করে। প্রাথমিক পর্যায়ে কানাডায় অবস্থানকারী পূর্বপরিচিত ফয়সাল নামের একজন ওনাইসিকে বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত মাদক কুশ সরবরাহ করতেন। পরে ওই সরবরাহকারী উত্তর আমেরিকার একটি দেশে চলে গেলে সেখান থেকে এ জাতীয় মাদক সাপ্লাই করতে থাকেন। এভাবে তিনি আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হন।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, বাংলাদেশে নতুন মাদক এক্সট্যাসির (মেথানিল ডাই অক্সি মেথাফিটামিন) অন্যতম মূলহোতা ওনাইসি সাঈদ। তিনি প্রায় ৪ বছর যাবত এক্সট্যাসিসহ অন্যান্য উচ্চমূল্যের মাদকের কারবারের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকে। এসব মাদক তিনি পার্সেল এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করে থাকে। মাঝে মধ্যে তিনি নিজেও বিদেশে গমন করে মাদকগুলো লাগেজে বহন করে দেশে নিয়ে আসতেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, সাঈদ বিদেশ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে আনা মাদকগুলো নিকটাত্মীয়দের ঠিকানায় আনতো। এরপর সেগুলো নিজে কালেক্ট করে গুলশান, বনানী ও ধানমণ্ডির মতো অভিজাত এলাকার ক্লাবগুলোতে সরবরাহ করতো। এজন্য তিনি ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
র্যাব আরও জানায়, নতুন বিভিন্ন মাদকের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টির ফলে সে এ নিয়ে অধ্যয়ন এবং গবেষণা শুরু করে। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নত দেশে সরবরাহের নিমিত্তে তিনি কুশ প্ল্যান্ট এর ফার্ম তৈরি করেন। টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল হিসেবে তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাটের ভেতর তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্ট পদ্ধতিতে চাষ করে। ইতোমধ্যে সে ওই ফার্ম থেকে একবার হারভেস্ট ও পরে প্রসেস করে কুশ মাদক প্রস্তুত করে। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদকাসক্তের কাছে বিক্রি করে।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, সাঈদের ইচ্ছা ছিল প্রচলিত মাদকগুলোকে ১০ থেকে ১২ গুণ আসক্তি তৈরি করবে। এজন্য গবেষণা চালিয়ে আসছিলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাঈদের সঙ্গে আর কে কে জড়িত এবং এতোগুলো টাকা কীভাবে তার কাছে এসেছে, সে বিষয়ে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর এবং মানি লন্ডারিংয়ের জন্য সিআইডিকে আমরা জানাব। তার বিরুদ্ধে মাদক, মানি লন্ডারিং এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হবে।