চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক ‘নতুন স্তরে উন্নীত করবে’
চীনা স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর বাংলাদেশ সফর দুদেশের সম্পর্ককে নতুন স্তরে উন্নীত করবে বলে জানিয়েছে চীন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে অত্যন্ত মূল্যায়ন করি। এ সফর সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করবে।’
ওয়াং ইয়ের সফরকে সামনে রেখে এসব কথা বলেন চুনয়িং। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে আজ শনিবার বিকেলে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।
মুখপাত্র বলেন, তাঁরা আশা করেন—এ সফর দুদেশের নেতাদের মধ্যে ‘অভিন্ন সমঝোতা’ বাস্তবায়ন এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক সহযোগিতাকে ‘গভীর’ করার সুযোগ দেবে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামীকাল রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং একই দিনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
চুনয়িং বলেন, ‘তাঁরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও শেয়ার্ড স্বার্থ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে মতবিনিময় করবেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর একটি হোটেলে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটি অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় সফর থেকে আলাদা হতে চলেছে। আমি এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলতে পারব না, কারণ এখনও শেষ মুহূর্তের আলোচনার ওপর অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ সন্ধ্যায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের বৈঠকে (৫-৬ আগস্ট) যোগদান শেষে কম্বোডিয়া থেকে আজ রাতে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেনন, ওয়াংয়ের সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে একাধিক সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তালিকাটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে পাঁচ-সাতটি হতে পারে। তিনি আশ্বস্ত করেন, পরিকল্পিত সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিগুলো বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, যদিও তালিকাটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ‘গভীর ও বিস্তৃত’ এবং দুদেশ ভবিষ্যতের সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ চীন সরকারের কাছে আরও জোরালো ভূমিকা চাইবে।
বাংলাদেশ ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে স্থান দিয়েছে। সংকট আলোচনা ও সমাধানের জন্য বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন—এই ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চলছে।
এর আগে গত বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশ আবার চীন থেকে ঋণ নিতে যাচ্ছে কি না এক সাংবাদিকের করা এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এবার নতুন করে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি নেই।’
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংকটের মধ্যে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর কী বার্তা দেবে—জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ সফরটি এ
অঞ্চলে চীনা পক্ষের নিয়মিত সফরের অংশ এবং এটি দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক পর্যালোচনা করার একটি সুযোগ।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওয়াং ই ঢাকায় এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি করেছিলেন। ‘এবার, তিনি আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য আসবেন।’
ওয়াং ১৯তম সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, স্টেট কাউন্সিলর এবং স্টেট কাউন্সিলের লিডিং সিপিসি মেম্বারস গ্রুপের সদস্য।