চুরির সময় বাধা দেওয়ায় গলাকেটে স্কুলছাত্রকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার ২
গাজীপুরে বাসায় চুরির সময় বাধা দেওয়ায় গলাকেটে ও ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্রকে হত্যার ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার চরমোকামিয়া এলাকার আনোয়ার হোসেন (২৫) এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার জাকিরপাড়া এলাকার মোফাজ্জল (৩১)। তারা গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা এলাকার পৃথক ভাড়া বাসায় থাকে।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাজীপুরা এলাকার চন্দ্রিমা হাউজিং প্রকল্পের হাবিবুর রহমানের বাড়ির চতুর্থ তলার সপরিবারে ভাড়া থেকে চাকরি করেন মিজানুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীর। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে মেজ ছেলে তৌসিফুল ইসলাম মুন্না (১৪)।
পুলিশ সুপার জানান, ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সকাল ৭টার দিকে মিজান কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। পরে মুন্নাকে বাসায় রেখে তাঁর মা হামিদা আক্তার মুকুল ছোট সন্তান তামিমকে নিয়ে পাশের স্কুলে যান। এরপর সকাল সোয়া ১০টার দিকে হামিদা আক্তার বাসায় ফিরে ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো অবস্থায় দেখতে পান। তিনি প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঘরের ভেতরে ঢুকে বেডরুমের খাটের উপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মুন্নার লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত মুন্নার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের গলা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা এবং পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ব্যাপারে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ২৪ জুলাই টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা।
মামলাটির প্রায় দুই মাস তদন্তকালে সন্দেহভাজন একজনকে আটক করলেও কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি থানা পুলিশ। পরে ক্লুলেস এ হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গাজীপুরের পিবিআইকে। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক হাফিজুর রহমান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত আনোয়ার ও মোফাজ্জলকে আজ মঙ্গলবার ভোরে গ্রেপ্তার করেন। তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে সহযোগীদের সহায়তায় তারা তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে খুন করার কথা স্বীকার করেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের বাসা থেকে লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় দুই বছর পর চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস স্কুলছাত্র তৌসিফুল ইসলাম মুন্না হত্যারহস্য উন্মোচন হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, বাসায় ভিকটিমের বাবা ও মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে ওই দুই যুবক সকাল ৯টার দিকে মুন্নাদের বাসায় যান। তারা মুন্নাকে ডেকে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ঘর থেকে মোবাইল ও ক্যামেরা লুট করার চেষ্টা করেন। এ সময় বাধা দিলে মুন্নার মুখ চেপে ধরে গলাকেটে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। পেটে ছুরিকাঘাত করায় মুন্নার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন মালামাল লুট করে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। মূলত চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলে আসামিদের চিনে ফেলায় ভিকটিম তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে হত্যা করে বলে স্বীকারোক্তিতে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন।