চুরি করা ট্রাকে পুনরায় ডাকাতি, গ্রেপ্তার পাঁচজন
নৈশ প্রহরীদের হাত-পা বেঁধে বগুড়ার গাবতলীতে তিন মার্কেটে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়, মোবাইলসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ডাকাত দলের দলনেতাসহ পাঁচজনকে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন দলনেতা দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল হালিম মিয়া জুয়েল, আলী হোসেন, সুমন মুন্সি ও হুমায়ুন কবির।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংঘবদ্ধ এ চক্রটি ট্রাক চালানোর পাশাপাশি ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। বগুড়ার গাবতলীতে ডাকাতির আগে একটি ট্রাক চুরি করে তারা সেখানে গিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাত দল ট্রাক নিয়ে এসে তিনটি মার্কেটে ডাকাতি করে। মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটের নৈশ প্রহরীদের অস্ত্র দেখিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে নয়টি দোকানে দুধর্ষ ডাকাতি করে। এ ঘটনায় দোকানের মালিকদের পক্ষ থেকে গাবতলী থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ ও নৈশ প্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দলটি দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি, চুরিসহ নানান অপরাধ কাজে জড়িত এবং সংঘবদ্ধ দলটি বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায় নিয়মিত ডাকাতি করত।’
অভিযানে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি ম্যাগাজিনসহ পিস্তল, চারটি গুলি, একটি বোল্ট কাটার, দুটি রাম দা, তিনটি শাবল, দুটি ছুরি, একটি কাঁচি, দশটি লাঠি, একটি হাতুড়ি, একটি টর্চ লাইট ও একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে স্বর্ণের তিনটি রুলির বালা, তিনটি নাকফুল, ১৫টি রুপার নূপুর, দুটি পিতলের বেঙ্গল চুড়ি, ইমিটেশনের তিনটি গলার হার, চারটি গলার চেইন, তিন জোড়া কানের দুল, একটি বড় আংটি, একটি ছোট আংটি ও তিন জোড়া হাতের চুড়ি উদ্ধার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানান, বিভিন্ন পেশার আড়ালে ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। তাদের স্থায়ী নিবাস বিভিন্ন জেলায় হলেও তারা সাভার ও এর আশেপাশের এলাকায় বসবাস করেন। এই সংঘবদ্ধ আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ জন। সংঘবদ্ধ দলটি ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডাকাতি করে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, তালা ও গ্রিল কাটার বিভিন্ন যন্ত্র তারা ট্রাকের সামনের কেবিনে চালকের আসনের নিচে লুকিয়ে রাখেন।
তারা বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও মার্কেটের দোকান, শো-রুম, জুয়েলারি শপে ডাকাতি করতেন। এর আগে তারা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছেন বলে জানান। পরিকল্পনা মোতাবেক মোট ১২ জনের এই ডাকাত দল দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গাবতলীর দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাতি করে। ডাকাতদের একটি দল বাজারে পাহারারত তিনজন নৈশ প্রহরীকে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এ সময় অপর দলটি আগে থেকে রেকি করা তিনটি মার্কেটের নয়টি দোকানের তালা ভেঙে দোকানের ভেতর রাখা মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী লুট করে।
ডাকাতি করে সাভারের নবীনগরে আসার সময় লুণ্ঠনকৃত মালামালের মধ্যে গার্মেন্টসের কাপড়ের আইটেমগুলো একটি মার্কেটে বিক্রি করেন। ডাকাতিকালে টিভি, মোবাইল ও অর্থ তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। এ ছাড়াও বেশ কিছু স্বর্ণালংকার তারা ঘটনার পরদিন অন্য দুটি মার্কেটের জুয়েলার্সের দোকানে বিক্রি করেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।