চোখ হারিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পেয়েছি পুলিশের হুমকি : রামকৃষ্ণ মণ্ডল
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের চারজন নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন। আহতদের একজন রামকৃষ্ণ মণ্ডল। মাদারীপুর সদর উপজেলা ছিলারচর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। পেশায় কাঠমিস্ত্রী। তিনি বলেছেন, চোখ হারিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পেয়েছি পুলিশের হুমকি, করা হয়েছে জেরার পর জেরা।
ঘটনার দিন রামকৃষ্ণ কালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভাষণ শুনতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে উপস্থিত হন। একপর্যায় গ্রেনেড হামলায় অনেকের সঙ্গে তিনিও আহত হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দীর্ঘদিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গ্রেনেড হামলায় এক চোখ হারান রামকৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি ছিলাম। অসুস্থ আমাকে প্রতিদিন পুলিশ এসে জেরা করত—আমি কোন পার্টি করি, কেন ওখানে গিয়েছি? আমাকে হুমকি-ধামকি দিত। তখন বলতেও পরিনি যে, আমি আওয়ামী লীগ করি। এমন দুঃসহ দিন কেটেছে তখন।’
রামকৃষ্ণ বলেন, ‘সেই হামলায় আমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। নিজের খরচেই চিকিৎসা করাই। কেউ আমাকে এক পয়সাও সহযোগিতা করেনি। এখনও কষ্ট করে মিস্ত্রীর কাজ করে আমার সংসার চালাই। চোখ নষ্ট হওয়ার কারণে ঠিকমত কাজও করতে পারি না। তবুও পেটের দায়ে কাজ করতে হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রামকৃষ্ণ মণ্ডলের দাবি—তিনি যেন তাঁর কাজ করে খেতে সহযোগিতার জন্য চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের নিহত চারজন হলেন—রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগনেতা নিহত লিটন মুন্সি, একই উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামের সুফিয়া বেগম, কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের নাছিরউদ্দিন ও ক্রোকিরচর গ্রামের যুবলীগনেতা মোস্তাক আহাম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু।
রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগনেতা নিহত লিটন মুন্সির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বৃদ্ধ বাবা আইয়ুব আলী মুন্সি ও মা আছিয়া বেগম ছেলের শোকে শোকাহত হয়ে আছেন। ২১ আগস্ট ছেলের নিহতের কথা তারা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।
নিহত লিটন মুন্সির মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আজ আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছি। লিটনের বাবা ও আমি দুজনেই বয়স্ক মানুষ। আমরা প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকি। লিটনের বাবা এখন কাজ করতে পারেন না। আমি অপারেশনের রোগী। মাসে আমার ওষুধ লাগে পাঁচ হাজার ৮০ টাকার মতো। ভাতা পাই তিন হাজার টাকা। খুবই কষ্টে দিনযাপন করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই—তিনি যেন একবারের জন্য হলেও আমার ছেলের কবর জিয়ারত করে যান।’