ছাত্রদলের বর্ধিত সভায় হট্টগোল, বাগ্বিতণ্ডা
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই ছয় মাস পার করল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। নতুন কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত নতুন নেতৃত্বের দেখা পায়নি বিএনপির এ ছাত্র সংগঠন। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা জড়িয়ে পড়েছেন বাগ্বিতণ্ডায়।
গতকাল মঙ্গলবার বর্ধিত সভায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এদিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চলে এ বর্ধিত সভা।
জানা গেছে, গতকাল অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের মধ্যে ৪১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে প্রায় ২২ জন কেন্দ্রীয় নেতা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। বেশির ভাগ নেতাই ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগগুলো উপস্থাপন করেন।
বর্ধিত সভার পর ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতারা সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাঁরা বর্ধিত সভায় হট্টগোল ও বাগ্বিতণ্ডার কথা জানান।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। ছাত্রদলের একজন সহসভাপতি ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুলেল বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন।
ছাত্রদলের সহসভাপতি মাজেদুল ইসলাম রুম্মন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুলের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় ছাত্রদলের সহসভাপতি হাফিজুর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে বলেন, ‘তোমরা যে বিভাগীয় টিমগুলোকে চাপ দিয়েছিলে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’ এ কথা বলার পর সাইফ মাহমুদ জুয়েল চুপ হয়ে যান।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মামুন খান সংগঠনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে বক্তব্য দিলে সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের সঙ্গে বাধে বাগ্বিতণ্ডা। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের সমাবেশে সহসভাপতি মামুন খানকে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল সুপার ফাইভের বিরুদ্ধে অনিয়ের বিষয়ে অভিযোগের প্রমাণ দেখাতে বললে সহসভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে যথাযথ প্রমাণ আছে। তখন সাইফ জুয়েল আর কথা বাড়াননি।’
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মইনুদ্দিন রাজু সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বিরুদ্ধে প্রটোকল লঙ্ঘন করার অভিযোগ তোলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সাংগঠনিক সম্পাদক কী করে সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের আগে প্রটোকল লঙ্ঘন করে বক্তব্য দেন?’ তাঁর এ বক্তব্যের পক্ষে সমর্থন জানান আরেক সহসভাপতি আশরাফ উদ্দিন ফকির লিঙ্কন।
ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক আবু আফসান ইয়াহিয়া কটাক্ষ করে বলেন, ‘ছাত্রদল তো চলে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ হিসেবে। উচ্চকক্ষই সব কিছু, নিম্নকক্ষের তো কোনো দাম নাই৷’
ছাত্রদলের এ নেতা উচ্চকক্ষ বলতে সংগঠনের সুফার ফাইভকে ইঙ্গিত করেন বলে দাবি করেন অন্যান্য নেতারা।
সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা জানালে অন্য নেতারা বলেন, ‘টাকার বিনিময় বা অন্য কোনো সুবিধার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারও পদায়ন যেন না হয়, সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আপনারা কোনো সুবিধা নিয়ে নতুন একটা কমিটি করবেন, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।’
কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ করা হলে তা কত সদস্যের হতে পারে, জানতে চাইলে ছাত্রদলের এক সহসভাপতি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কালকের সভায় আমাদের জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন—১৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি করার জন্য। কিন্তু, তাঁরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে ২০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি করার জন্য রাজি করিয়েছেন।’
ওই সহ-সভাপতি বলেন, ‘আমরা উপস্থিত সবাই সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে বলেছি, যাতে করে অর্থের বিনিময়ে বা কারো সুপারিশে অযোগ্য কেউ যেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পায়। যাঁরা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং যাঁরা এ বিপৎসংকুল সময়ে ছাত্রদলের রাজনীতি করে যাচ্ছেন, তাঁদের যেন মূল্যায়ন করা হয় এবং তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়।’
বর্ধিত সভায় হট্টগোলের বিষয়ে জানতে চাইলে অপর এক সহসভাপতি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের সিদ্ধান্তে সংগঠন পরিচালনা করছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পরামর্শ করেন না। তা ছাড়া কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও আমরা এখনও ইউনিটগুলোর কমিটি করতে পারিনি। তাই সবার মধ্যেই কিছু অসন্তোষ রয়েছে।’
ছাত্রদলের আরেক সহসভাপতি বলেন, ‘আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সত্যি, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে করোনা সংক্রমণ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য আমরা ঠিকভাবে কাজ করতে পারিনি।’
বর্ধিত সভায় হট্টগোল ও বাগ্বিতণ্ডার বিষয়ে জানতে ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বারবার চেষ্টার পরও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।