ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাইয়ে গুরুত্ব পাবে মানবিকতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা
ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন হবে আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর। সম্মেলনকে ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সংগঠনটির শতাধিক নেতাকর্মী। তারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। সম্মেলন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে লবিং-তদবিরের ব্যস্ততাও বাড়ছে তাদের। তবে, শীর্ষপদে এবার তারাই আসবেন, যারা বিতর্কমুক্ত, যোগ্য ও মানবিক কাজের প্রমাণ রেখেছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পর্যায়ের একাধিক সূত্রের তথ্যে এসব কথা জানা যায়।
নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন মেনে ভবিষ্যতে দলে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির জন্য শীর্ষ একটি পদে নারী নেত্রী দেওয়ারও কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে লড়তে পদপ্রত্যাশীরা সোচ্চার। ইতোমধ্যে রাজনীতির আঁতুড়ঘরখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও বাড়িয়েছেন তাদের যাতায়াত। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও মতামত তুলে ধরছেন।
এদিকে, ৮ ডিসেম্বর প্রধান অতিথি হিসেবে দুদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগসূত্রে জানা যায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ২৭ বছর। বিগত তিন কমিটির সম্মেলনে প্রার্থীদের বয়স অনূর্ধ্ব ২৯ বছর করা হয়। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো সেশনজট নেই এবং যথাযথ সময়ের মধ্যেই সবাই শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারছেন, এজন্য বয়স অনূর্ধ্ব ২৯ বছরই থাকতে পারে। তবে, এটি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই হবে।
অন্যদিকে, বিগত কয়েকটি কমিটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শীর্ষ দুই থাকত। তবে, এবার মোড় নিতে পারে অন্যদিকে, এমনটা ধারণা করছেন অনেকে।
ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদার। আছেন জাতিসংঘের রিয়েল হিরো খ্যাত ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতও।
করোনা সংকটের সময় রমজানে অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিলোত্তমা শিকদার। এর স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ওই পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি নারীদের ৫০টি সেলাই মেশিন এবং ছয়টি ল্যাপটপ বিতরণ করেছেন।
তিলোত্তমা শিকদার ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ঢাবির সিনেট সদস্য ছিলেন। তিনি একসময় সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
অন্যদিকে, ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত করোনার সময় কঠোর লকডাউনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করে প্রশংসা কুড়ান এবং জাতিসংঘের খেতাবে ভূষিত হন।
এ ছাড়া বর্তমান সহসভাপতির মধ্যে আরও যারা আগামীর কমিটিতে পদ পেতে চাইছেন, তারা হলেন রাকিব হোসেন, মাজহারুল ইসলাম শামীম ও খায়রুল হাসান আকন্দ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে পদপ্রত্যাশী আরিফুজ্জামান আল ইমরান ও তাহসান আহমেদ রাসেল।
সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে রয়েছেন বরিকুল ইসলাম বাঁধন, শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান) ও করোনামহামারির সময় অক্সিজেন সেবা দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ানো সাদ বিন কাদের চৌধুরী।
এ ছাড়া কর্মসংস্থানবিষয়ক উপসম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়, উপবিজ্ঞান সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক সোলাইমান ইসলাম মুন্না, উপসাহিত্য সম্পাদক জয়জিৎ দত্ত রয়েছেন পদের দৌড়ে। উপদপ্তর সম্পাদক আহসান হাবিব ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক সোলায়মান আসলাম মুন্না, উপবিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আহসান হাবিব, উপগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত, উপপ্রচার সম্পাদক সুরাপ মিয়া সোহাগ, উপ বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক মো. ইরফানুল হাই সৌরভ, উপশিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক মো. নিয়ামত উল্লাহ তপনও আছেন পদের অপেক্ষায়। আরও আলোচনায় রয়েছে ঢাবি ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজও।
এ ছাড়া যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন—মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, আইনবিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসাইন শাহাদাত, কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মুহাম্মদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মন, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শামীম শেখ তুর্জ ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সিদ্দিকী সুজন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস। যদিও সুজন, জিতু ও তাপসের বয়স ৩০ ঊর্ধ্ব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে প্রার্থী হিসেবে যারা আলোচনায় রয়েছেন, তারা হলেন--ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ, চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের এবং বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জামি উস সানী।
নতুন কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রে যোগ্য, বিতর্কমুক্ত এবং যারা আওয়ামী পরিবারের সন্তান তাদেরকেই বিবেচনা করা হবে। বয়সের ব্যাপারে গঠনতন্ত্রে অনূর্ধ্ব ২৭ বছর আছে। এটাকেই বিবেচনা করা হবে। তবে, এই ব্যাপারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেন। এবারও তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।’