ছাত্রলীগের সম্মেলন আজ, শীর্ষ দুই পদ চায় ২৫৪ জন
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আজ মঙ্গলবার। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ও বরণ করার প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ পেতে প্রার্থী হয়েছেন ২৫৪ জন। তার মধ্যে সভাপতি পদপ্রত্যাশী ৯৬ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৫৮ জন।
ছাত্রলীগের এই সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়, এবারের নেতৃত্ব বাছাইয়ে যোগ্যতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে সাংগঠনিক দক্ষতা ও করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন প্রকৃতিক দুর্যোগে মানবিক কর্মকাণ্ড। সেই সাথে মেধাবী ছাত্র ও আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা বেশি গুরুত্ব পাবে। এছাড়া অতীতের আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, বয়সের সীমারেখা এবং বিরোধী মতাদর্শের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কী না, সেসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন মেনে ভবিষ্যতে দলে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির জন্য শীর্ষ একটি পদে নারী নেতৃত্ব দেওয়ার কথাও ভাবছে দলীয় হাইকমান্ড।
বিগত কয়েকটি কমিটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শীর্ষ দুই পদ থাকত। তবে, এবার মোড় নিতে পারে, এমনটা ধারণা করছেন অনেকে। এসব বিষয় মাথায় রেখে মাঠ পর্যায়ে একাধিক জরিপ করেছেন দলটির হাইকমান্ড।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে লড়তে পদপ্রত্যাশীরা সোচ্চার। ইতোমধ্যে রাজনীতির আঁতুড়ঘরখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও বাড়িয়েছেন তাদের যাতায়াত। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও মতামত তুলে ধরছেন।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদার। আছেন জাতিসংঘের রিয়েল হিরো খ্যাত ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতও।
করোনা সংকটের সময় রমজানে অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিলোত্তমা শিকদার। এর স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ওই পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি নারীদের ৫০টি সেলাই মেশিন এবং ছয়টি ল্যাপটপ বিতরণ করেছেন। তিলোত্তমা শিকদার ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ঢাবির সিনেট সদস্য ছিলেন। তিনি একসময় সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
অন্যদিকে, ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত করোনার সময় কঠোর লকডাউনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করে প্রশংসা কুড়ান এবং জাতিসংঘের খেতাবে ভূষিত হন।
এ ছাড়া বর্তমান সহসভাপতির মধ্যে আরও যারা আগামীর কমিটিতে পদ পেতে চাইছেন তারা হলেন রাকিব হোসেন, মাজহারুল ইসলাম শামীম ও খায়রুল হাসান আকন্দ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে পদপ্রত্যাশী আরিফুজ্জামান আল ইমরান ও তাহসান আহমেদ রাসেল।
সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে রয়েছেন রকিকুল ইসলাম বাঁধন, শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান) ও করোনামহামারির সময় অক্সিজেন সেবা দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ানো সাদ বিন কাদের চৌধুরী।
এ ছাড়া কর্মসংস্থানবিষয়ক উপসম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়, উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহমুদ হাসান, উপবিজ্ঞান সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক সোলাইমান ইসলাম মুন্না, উপসাহিত্য সম্পাদক জয়জিৎ দত্ত রয়েছেন পদের দৌড়ে। উপদপ্তর সম্পাদক আহসান হাবিব ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক সোলায়মান আসলাম মুন্না, উপবিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আহসান হাবিব, উপগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত, উপপ্রচার সম্পাদক সুরাপ মিয়া সোহাগ, উপবিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক মো. ইরফানুল হাই সৌরভ, উপশিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক মো. নিয়ামত উল্লাহ তপনও আছেন পদের অপেক্ষায়। আরও আলোচনায় রয়েছে ঢাবি ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজও।
এ ছাড়া যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন—মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, আইনবিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসাইন শাহাদাত, কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মুহাম্মদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মণ, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শামীম শেখ তুর্জ, ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সিদ্দিকী সুজন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস। যদিও সুজন, জিতু ও তাপসের বয়স ৩০ ঊর্ধ্ব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে প্রার্থী হিসেবে যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন-ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ, চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের এবং বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জামি উস সানী।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জমা পড়া ফরমগুলো আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। ফরমে উল্লেখ করা তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা তৈরি করবেন আওয়ামী লীগের চার নেতা। এরা হলেন প্রেসিডিয়ামের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বি এম মোজাম্মেল হক। পরে তারা সেটি ছাত্রলীগের অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠাবেন। তার পরামর্শেই চূড়ান্ত হবে নতুন নেতৃত্ব।
সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার শামস-ই-নোমান বলেন, গত ৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ফরম সংগ্রহ এবং জমা দেওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৯৬ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৫৮ জন ফরম জমা দিয়েছেন। অনেকে কেবল সভাপতি পদে ফরম জমা দিয়েছেন। অনেকে সাধারণ সম্পাদক পদে। কেউ বা আবার উভয় পদেই ফরম জমা দেন। শীর্ষ এই দুই পদে ফরম জমা দেওয়াদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের অন্যান্য প্রান্তের শিক্ষার্থীও আছেন।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানী দায়িত্ব পান। তারা পদ হারালে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সভাপতি পদে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক পদে লেখক ভট্টাচার্য আসেন।
নতুন কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রে যোগ্য, বিতর্কমুক্ত এবং যারা আওয়ামী পরিবারের সন্তান তাদেরকেই বিবেচনা করা হবে। বয়সের ব্যাপারে গঠনতন্ত্রে অনূর্ধ্ব ২৭ বছর আছে। এটাকেই বিবেচনা করা হবে। তবে, এই ব্যাপারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেন। এবারও তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।’