ছাত্রলীগে ভিড়ছে ছাত্রদল, বাড়ছে অসন্তোষ
ফরিদপুরে ছাত্রলীগের পদ দেওয়া নিয়ে যেন বিতর্ক থামছেই না। একের পর এক বেড়িয়ে আসছে ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগের এসে বড় পদ বাগিয়ে নেওয়ার তথ্য। যা এখন রীতিমতো ভাইরাল ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এমনি একটি ঘটনার মুখোমুখি এবার মুধখালী উপজেলা ছাত্রলীগ। এর আগে শুরু হয় আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান রনি পদে থাকা অবস্থায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া নিয়ে বিতর্ক।
মধুখালী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেনকে ২০১৮ সালে যে প্যাডে রায়পুর ইউনিয়ন শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক করে ছাত্রদলের কমিটির ঘোষণা করা হয়, তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরই মধ্যে নবগঠিত মুধখালী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে তাঁকে দেওয়া হয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। নাজমুল অবশ্য এই ঘটনা ও ছবিকে কারসাজি বলছেন।
ইউনিয়ন ছাত্রদলে থাকা এক নেতাকে পদোন্নতি দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে সংগঠনে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ।
যদিও নাজমুলের ছাত্রদলে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করছেন তাকে পদ দেওয়া ও সুপারিশ করা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগনেতারা। নাজমুল নিজেও দাবি করেছেন, তার পরিবার সব সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছে।
ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, নাজমুলের ছাত্রদল সম্পৃক্ততার অভিযোগ তারাও শুনেছেন। এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১২ জুন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান ও ফাহিম আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মধুখালী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিন মোল্যা আর ইনজামামুল আলম অনিককে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। কমিটিতে নাজমুল হোসেনকে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি রবিন মোল্যার দাবি, নাজমুল দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছেন। সেই হিসেবেই তাকে পদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নাজমুল ছাত্রদল করতেন, বিষয়টি আমাকেও অনেকেই জানিয়েছে, তবে খোঁজ নিয়ে এর কোনো সত্যতা পাইনি।’
তবে মধুখালী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওমর ফারুক জানান, ২০১৮ সালের উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটিতে নাজমুল হোসেন যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০১৮ সালে নাজমুল ছাত্রদলের ইউনিয়ন কমিটিতে থেকে তিন বছর পর ছাত্রলীগের উপজেলা কমিটিতে ঢুকে পড়েন।
মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু বলেন, ‘নাজমুল হোসেন ছাত্রদলের রাজনীতি করত-এই বিষয়টি জানা নেই। তবে নাজমুল দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে তাকে দেখেছি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান বলেন, ‘রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই নাজমুল হোসেনকে ছাত্রলীগে পদ দেওয়া হয়েছে। নাজমুল দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার সুপারিশেই তাকে পদ দেওয়া হয়েছে।’ নাজমুল হোসেন ছাত্রদল করতেন- এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।
রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার শেখ বলেন, ‘নাজমুল হোসেনের বাড়ি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যয়নপত্র পেয়েই নাজমুলকে ছাত্রলীগের পদ দিতে আমি সুপারিশ করেছি।’
নাজমুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ছাত্রদল করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পারিবারিক কারণেই ছোটবেলা থেকেই আমিও ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছি।’
নাজমুল আরও বলেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপনারা এলাকায় এসে খোঁজ নিয়ে দেখেন আমি এবং আমার পরিবার সম্পর্কে।’
সম্প্রতি আলফাডাঙ্গা ছাত্রদল-ছাত্রলীগ নেতা রায়হান রনিকে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রদল এক সঙ্গে বহিষ্কার করে। এরই মধ্যে বিষয়টি ‘টক অব দ্য জেলায়’ পরিণত হয়েছে। এর আগে এই বিষয়টি নিয়ে পত্রিকা ও টিভিতে নিউজ হওয়ার পর থেকে জেলাজুড়ে আলোচিত হতে থাকে বিষয়টি। বহিষ্কারের এমন নজির সারা দেশের মধ্যে প্রথম বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
জেলার আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ১২ বছর ক্ষমতায়-এই সুযোগে সুযোগ সন্ধানীরা ঢুকে পড়ছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে। তারা মূলত ফেসবুক ও নেতাদের ছবি পোস্টসহ নানা ভাবে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এ ছাড়া তারা পদপদবি পেতে টাকা ঢালছে সেসব নেতার পেছনে।
এতে অনেক নেতা না বুঝেই তাদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে। এদের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এসব জেলা নেতা।
উল্লেখ্য, নব গঠিত বোয়লামারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত সিদ্দিকি বিবাহিত, এই ঘটনা ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। তার বিয়ের রেজিস্ট্রেশন কপি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। সেখানে ২০১৫ সালের ২২ মার্চ বিয়ের রেজিস্ট্রেশন, যার নম্বর -৩০৪ দেওয়া রয়েছে।
এর আগে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে বিয়ে করা নিয়ে অভিযোগ ওঠে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানজিদুর রশীদ রিয়ান ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু পরস্পর আপন শালা-দুলাভাই। এ নিয়েও নানা কথা চাউর রয়েছে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে। এই ঘটনা জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।