জঙ্গিনেতা গুনবি হেফাজতের মাহফিলে জঙ্গিবাদ ছড়াতেন
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা মাহমুদ হাসান গুনবিকে (৩৬) রাজধানী ঢাকার শাহ আলী থানার বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, গুনবি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে যোগদান করে জঙ্গিবাদের মতাদর্শ প্রচার করতেন।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই দাবি করেন।
তবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মাহমুদ হাসান গুনবি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বা তাদের কোনো পদেও নেই। কিন্তু নিজেকে জানান দেওয়ার জন্য তিনি হেফাজতসহ অন্যান্য সংগঠনের ওয়াজ মাহফিলে যোগদান করে উগ্রবাদী বক্তব্য দিতেন। আমরা জানতে পেরেছি, সাম্প্রতিক সময়ে যারা সরকারবিরোধী নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন; গুনবির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।'
র্যাবের দাবি, গুনবি দাওয়াত ইসলাম নামের একটি সংগঠন পরিচালনা করতেন। এ সংগঠনের ব্যানারে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করে জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্তির বিশেষ উদ্যেগ গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে তারা বিশেষ করে ‘মনস্তাত্ত্বিক অনুশোচনা’ জাগ্রত করার কৌশল অবলম্বন করে। যদিও এ সংগঠনটি নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন নয়।
তাহলে কেন মাহমুদ হাসান গুনবিকে জঙ্গি বলা হচ্ছে- প্রমন প্রশ্নে খন্দকার আল মঈন বলেন, 'জঙ্গি বলছি, কারণ তিনি আমাদের কাছে নিজেকে আনসার আল ইসলামের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। আর এই সংগঠনটিকে ২০১৭ সালে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।'
মাহমুদ হাসান গুনবি আনসার আল ইসলামের একজন আধ্যাত্মিক নেতা দাবি করে খন্দকার আল মঈন বলেন, 'গুনবি বাড়ি থেকে পলাতক লোকজনকে জঙ্গি মতাদর্শে নেওয়ার জন্য গোপন বৈঠকে আধ্যাত্মিক কথাবার্তা বলতেন। গুনবি কয়েকজন ভিন্ন ধর্মালম্বীকে ইসলাম ধর্মে এনে তাদেরকে জঙ্গিবাদে জড়াতে সক্ষম হয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।' তবে কতজনকে ইসলাম গ্রহণ করিয়েছেন, তা গুনবি বলেননি বলে র্যাবের দাবি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত র্যাবের পরিচালক জানিয়েছেন, 'গুনবি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি ২০০৮ সালে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া থেকে তাইসির দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে। তারপর তিনি ঢাকাসহ কুমিল্লা, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সজারের বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। পাশাপাশি ধর্মীয় মতাদর্শের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। গুনবি ২০১০ সাল থেকে ওয়াজ শুরু করেন। তারপর তিনি ২০১৪ সাল থেকে ধর্মীয় বক্তব্যে উগ্রবাদীত্ব প্রচারে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এ ছাড়া তিনি ধর্মীয় পুস্তকের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন।'
গুনবি প্রথমে হুজি (বি) সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, 'পরবর্তীতে জসিম উদ্দিন রহমানির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। পরে তিনি আনসার আল বাংলা টিমের (আনসার আল ইসলাম) সঙ্গে যুক্ত হন। জসিম উদ্দিন রাহমানি গ্রেপ্তারের পর গুনবি সংগঠনের উগ্রবাদীত্ব প্রচারক হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব দাবি করেছে, মাহমুদ হাসান গুনবি আনসার আল ইসলামের দাওয়াত ও প্রশিক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন/অতিথি বক্তা বা দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষকতা বা পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। মাদ্রাসায় সম্পৃক্ত হয়ে জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ঘটিয়ে থাকেন বলে জানা যায়।
জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ ও আত্মঘাতী জঙ্গি সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশে দর্শন বা মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন একটি আবশ্যিক বিষয়। র্যাবের দাবি, মাহমুদ হাসান গুনবি আনসার আল ইসলামে একজন দর্শন পরিবর্তনকারীর ভূমিকা পালন করে থাকেন। দর্শন পরিবর্তনের কৌশল সম্পর্কে গুনবি র্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি গোপন আস্থানায় মানুষকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতেন। সেই প্রশিক্ষণে তিনি মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন করার চেষ্টা করতেন। ফলে সংগঠনে তাকে আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে মানতেন অনেকে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গুনবি নিজ পেশার আড়ালে জঙ্গিবাদ প্রচার করে থাকেন। তিনি একাধিক ধর্মীয় সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। সংগঠন/প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতর তার ঘনিষ্টদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতায় এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে সাইফুল ইসলাম, আব্দুল হামিদ, আনিছুর রহমান ও হাসান উল্লেখযোগ্য। সংগঠনের অভ্যন্তরে উগ্রবাদী মতাদর্শদের প্রচারে তিনি ছায়া সংগঠন পরিচালনা করতেন। যাদেরকে ‘মানহাজী সদস্য’ বলা হয়। সদস্যরা সংগঠনের ভেতরে জঙ্গি সদস্য তৈরি করতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিত।