জঙ্গিরা অনলাইনে তৎপর, পূজায় শঙ্কা নেই, নিরাপত্তার চাদর মণ্ডপে-শহরে
সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবে অনাকাঙ্ক্ষিত জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, পূজার মণ্ডপগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। তবে, জঙ্গিরা মণ্ডপে হামলার জন্য অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন কশিশনার।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় শফিকুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন।
তালেবান ক্ষমতা গ্রহণ করার পর জঙ্গিরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে, সেজন্য পুলিশও বেশ তৎপর। এই অবস্থায় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে হামলার আশঙ্কা কিংবা ঝুঁকি আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা ওই রকম ঝুঁকি দেখছি না। তবে, আশঙ্কার কথাটা কিন্তু আমরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। কারণ, জঙ্গিরা অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছে। যেটাকে বলে, একাকী উৎসাহী হয়ে হামলা চালানো; সেটার জন্য জঙ্গিরা অনবরত পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে। এবং তারা বলছে, রাত্রের বেলা যখন পুলিশ থাকবে না, মানুষজন কম থাকবে; সে সময়টা বেছে নেওয়ার জন্য। যেকোনো একটি পূজা মণ্ডপে হামলার জন্য তৈরি হওয়া। এ ধরনের নানাবিধও প্রচারণা জঙ্গিরা চালাচ্ছে।’
‘তবে, জঙ্গিদের প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ কিছু করছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এসব নিয়ে আমাদের যারা কাজ করেন, তারা সম্পূর্ণভাবে অ্যালার্ট আছেন’, যোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
‘বড় মণ্ডপে সার্বক্ষণিক, ছোটতে মোবাইল টিম’
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দুর্গাপূজা নিয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি থাকে। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মালম্বীদেরও ব্যাপক প্রস্তুতি থাকে এ পূজা উদযাপনে। আমরা নিরাপত্তার দিকটা দেখি। সেদিক থেকে বলতে পারি, সব রকমের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া আছে। বিশেষ করে বড় মন্দির যেগুলো, সেখানে সার্বক্ষণিক আমাদের পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। সিসি টিভির অধীনে থাকবে। আর ছোট মন্দিরগুলো আমাদের মোবাইল টিম দিয়ে কাজ চালানো হবে।’
ডিএমপির কমিশনার বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা আগের মতো সব মন্দিরে পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছি না। কারণ, আমাদের পুলিশ ফোর্স যেহেতু ব্যারাকে থাকে সেহেতু যেকোনো একজন আক্রান্ত হলে পুরো ব্যারাকটা আক্রান্ত হওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে। সেজন্য আমরা সব জায়গায় আমাদের ফোর্স ওইভাবে মোতায়েন করছি না। কিন্তু, নজরদারিটা প্রতিটি পূজা মণ্ডপে থাকবে। আমাদের ডিবির টিম, এআইডির টিম, এসবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাসহ সাদা পোশাক, ইউনিফর্মে ও র্যাবের বাহিনী মিলে পুরো শহরে আমরা মূলত আলাদা একটি নিরাপত্তার চাদর তৈরি করার চেষ্টা করব। যাতে এখানে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কেউ ঘটাতে সাহস না পায়।’
মাস্ক বাধ্যতামূলক, বৃদ্ধদের না নেওয়ার অনুরোধ
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা পূজারী-পূর্ণার্থী ভাইবোনদের অনুরোধ করব, কোনোভাবেই যেন স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা না হয়। আপনি নিজে বিপদে পড়বেন, পাশাপাশি আপনার পরিবারের বয়স্ক সদস্যটির বড় বিপদে ফেলতে পারেন।
ফলে পূজা মণ্ডপে মাস্ক পরিধান না করে কেউ আসবেন না উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, যেখানে পুলিশ উপস্থিত থাকবে, সেখানে আমরা মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতেই দেব না। এ ছাড়া যেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবে, তারাও মাস্কের ব্যাপারটি শতভাগ নিশ্চিত করবে।
‘এখন করোনা শনাক্তের হার কম বলে আত্মতৃপ্তিতে ভোগা যাবে না। এ ছাড়া পরিবারের যারা বয়স্ক এবং টিকা গ্রহণ করেননি এখনো, দয়া করে তাদের পূজা মণ্ডপে আনবেন না।’
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, অন্যান্যবারের মতো এবারও দুর্গাপূজা উৎসব উদযাপিত হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখে আমরা উৎসবটি পালন করতে পারব।’