জনগণকে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরছে না সরকার : মির্জা ফখরুল
সরকার প্রকৃত তথ্য কখনো জনগণের সামনে তুলে ধরছে না অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সঠিক তথ্য না দেওয়ার পিছনে কারণ একটাই, সেটা হচ্ছে জিডিপি ও সঞ্চয়ের হার অনেক নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। যার ফলে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, বিনিয়োগ আসছে না।’
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে বিনিয়োগ। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন হবে না। উৎপাদন না হলে সঞ্চয় হবে না আর সঞ্চয় না হলে বিনিয়োগ হবে না। এটা একটা সাইকেলচক্র। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার এখানে প্রতারণা করছে, মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। উৎপাদন উন্নয়ন বিনিয়োগ সঞ্চয় সব মিলিয়ে তারা যেসব তথ্য দিচ্ছে, সবগুলোই মিথ্যা তথ্য।’
সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের পাশাপাশি সংসদে প্রধান বিরোধীদলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংলাপের শুরুতেই আমরা বলেছিলাম, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আমরা যোগাযোগ করব। যোগাযোগ করছি। সংলাপ করব, সংলাপ করছি। ধারাবাহিকভাবে আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।'
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো হবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা স্পষ্ট ও প্রমাণিত বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ গ্রহণযোগ্য হবে না, হতে পারে না। বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেটি করেছে, সেখানে তারা গণতন্ত্রের মুখোশ পরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত দেখায়। দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখে। এর ফলে মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, ভোট দিতে পারছে না। দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের নাগরিকরা তাদের সেই অধিকার থেকে আজ বঞ্চিত হয়েছে। এর কারণটাই হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনারের কোন সুযোগ নেই, কোন ক্ষমতা নেই, দলীয় সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে, এখানে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারার।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি একটাই নিজেদের স্বার্থে সম্পদ লুট করা এবং সেই সম্পদ বিদেশে পাচার করা। একটি সরকারের যখন উদ্দেশ্যই হয়ে দাঁড়ায়, জনগণের সম্পদ লুট করা তখন দেশের অর্থনীতি সাসটেইনেবল হয় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থের জন্য পরিকল্পিতভাবে নিয়মনীতি বিসর্জন দিয়ে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের সুযোগ প্রদানের ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে, ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করার ফলে বর্তমানে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এই সব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি আইন তৈরি করে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২-৩ বছরে বন্ধ হবার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তা এখনো চলমান আছে। বেশ কিছু সংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়াই ৩ বছর সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্ছা প্রায় ৮.৫৪ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে চুক্তি করে দুর্নীতি পরায়ণ ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিদ্যুৎখাতে রাষ্ট্রীয় দায় দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার লোডশেডিং শূন্য কোঠায় নিয়ে আসায় উৎসব করেছে আতশবাজি পুড়িয়ে। অন্যদিকে এখন শহরে ২-৩ ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে অতীষ্ঠ করে তুলেছে। শিল্পে ও কৃষিতে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।'
সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিবিএস প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭৩.৫৬ শতাংশে। যা নয় বছরে সর্বোচ্চ, আইডিপিআরআই এর হিসাব অনুযায়ী একেবারে নতুন করে ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে পতিত হচ্ছে। এটা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাসকারী শতকরা ৪২ ভাগের অতিরিক্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অনির্বাচিত সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক নীতি যা শুধু লুটপাটের অর্থনীতি তৈরি করছে, সরকারদলীয় এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ীদের অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধি করছে; অন্যদিকে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং কৃষক, শ্রমিকেরা আরও দরিদ্র হচ্ছে। প্রকট আয়ের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই বৈষম্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের এই ধরনের ন্যক্কারজনক, অসামাজিক কার্যকলাপকে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মদদ দেওয়া হয় বলে এই ঘটনাগুলো ঘটছে।’