জন্মদিনে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যা
রাজশাহীতে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে সানি নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তেরা। নগরীর হেতেমখাঁ সবজিপাড়া এলাকায় গতকাল রোববার রাতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। গতকাল সানির ১৮তম জন্মদিন ছিল বলে জানা গেছে।
নিহত সানি রাজশাহী পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখির ছোট ছেলে। তাঁরা নগরীর দড়িখরবোনা রেলগেট এলাকায় থাকতেন। দুমাস আগে সানি বিয়ে করেছিলেন।
সানির পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, গতকাল রোববার রাতে সানির জন্মদিন পালনের এক পর্যায়ে বাথরুমে পড়ে গিয়ে তাঁর এক বন্ধু আহত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় সানি ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু। এ সময় কয়েকজন যুবক হাসপাতাল থেকে সানি ও তাঁর এক বন্ধুকে জোর করে তুলে হেতেমখাঁ সবজিপাড়া এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সানিকে কুপিয়ে জখম করে রাস্তার পাশের ড্রেনে ফেলে চলে যায় তারা। পরে রাত ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন সানিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পরিবারের সদস্যেরা। তাঁদের আহাজারি-আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের চারপাশ।
নিহত সানির বাবা রফিকুল ইসলাম পাখি কাঁদতে কাঁদতে জানান, রোববার তাঁর ছোট ছেলে সানির জন্মদিন ছিল। তাঁর ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বন্যার কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। গতকাল রাতে কয়েকজন বন্ধু সানির জন্মদিন উদ্যাপন করে। সেখানে বাথরুমে পড়ে গিয়ে সিজার নামের সানির এক বন্ধুর থুতনি কেটে যায়। এরপর সানি, নয়ন ও তৈয়বুর নামের আরেকজন আহত সিজারকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখনই হাসপাতালের সামনে থেকে চার জনকে একসঙ্গে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। সিজারকে আহত দেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে নয়ন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আর, তৈয়বুর ও সানিকে হেতেমখাঁ সবজিপাড়া এলাকায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সানিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আহত হয় তৈয়বুরও।
সানির বাবার দাবি, হেতেমখাঁ সবজিপাড়া এলাকার বিএনপির নেতা দিতির ছেলে আন্নাফ দলবল নিয়ে সানিকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
সানির চাচা যুবরাজ জানান, দুজনকে কোপানোর পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এর মধ্যে সানিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ছাড়া আহত তৈয়বুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল, তা তিনি অনুমান করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, হেতেমখাঁ সবজিপাড়া মহল্লার সমবয়সি কিছু ছেলের সঙ্গে দড়িখরবোনা রেলগেট এলাকার সানিসহ কয়েক জনের বিরোধ চলছিল। এর আগে দুপক্ষের মধ্যে একাধিক বার মারামারি হয়েছে। পরে মীমাংসাও হয়েছে। এ বিরোধের জের ধরেই রোববার রাতে রামেক হাসপাতালের সামনে থেকে সানিকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে রোববার রাতে হাসপাতালে যান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর জোনের নারী কাউন্সিলর সামসুন নাহার। এ সময় তিনি নিহত পরিবারের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা তাঁর পরিচিত বলে অভিযোগ করা হয়।
এ ছাড়া সানি হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাতেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে জড়ো হন শতাধিক নারী-পুরুষ। তাঁরা একত্রিত হয়ে হেতেমখাঁ সবজিপাড়ার দিকে যান। এ সময় ওই এলাকাতেও উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালের সামনে ও হেতেমখাঁ সবজিপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।