জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে মোংলা
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে নদীর পানি গতকাল মঙ্গলবার দিনের তুলনায় রাতে আরও বেড়েছে। এখন পূর্ণিমা চলছে। ফলে এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক চেয়ে তিন থেকে ছয় ফুটের বেশি উঁচু জলোচ্ছ্বাস হবে। ফলে মোংলাসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া কার্যালয়।
‘ইয়াস’-এর প্রভাবে মোংলা বন্দরসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় কখনও রোদ, আবার কখনও থেমে থেমে বৃষ্টি এবং সেইসঙ্গে বাতাস বইছে। তবে আজ বুধবার সকাল থেকে এখানকার আবহাওয়া কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে।
এর আগে গতকাল রাতে থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। রাতের জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় চার থেকে পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। তখন নদীর পাড়ের কয়েকটি এলাকায় পানি উঠলেও তা ভাটায় আবার নেমে যায়। এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে নিরাপদ ও সতর্ক থাকার জন্য ওইসব এলাকায় গিয়ে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেন এবং মানুষজনের খোঁজ-খবর নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার। রাতে ওই এলাকার ১০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে রাখা হয়।
এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব ‘এলার্ট ওয়ান’ জারি করে বিদেশি জাহাজগুলোকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তবে এসব জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখরউদ্দিন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে মোংলার পশুর নদীর পাড়ের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কানাইনগর, চিলা, সুন্দরতলা, কলাতলা ও জয়মনি এলাকার মানুষকে সতর্ক করতে তৎপরতা চালায় স্থানীয় প্রশাসন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও কমলেশ মজুমদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান এসব এলাকায় গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
ঝুঁকিপূর্ণ এই গ্রামগুলোর মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা রাখা হয়। সেখানে আগতদের জন্য কোভিড-১৯ সুরক্ষাসহ খাবার বিতরণেরও ব্যবস্থা করে উপজেলা প্রশাসন। তবে গভীর রাত পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কোনো লোকজন আশ্রয় নেয়নি। মাঝে মাঝে হালকা-মাঝারি বৃষ্টি ও বাতাস বইলেও আবহাওয়া পরিস্থিতির ততটা অবনতি হয়নি। মোংলা বন্দর পৌরসভার পক্ষ থেকেও মাইকিং করে দফায় দফায় আবহাওয়ার সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়।
এদিকে বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, ‘ইয়াস যতই এগিয়ে আসছে ততই উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এরই মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এটি আরও বাড়তে পারে।’