জাপানি দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় রাখতে নির্দেশ
দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর জাপানি মায়ের জিম্মায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ১৫ ডিসেম্বর দুই শিশুকে আদালতে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ওই দিন পরবর্তী আদেশ দিবেন আদালত।
আজ রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাঁকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম। বাংলাদেশি বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাঁকে সহযোগিতা ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম।
গত ৫ ডিসেম্বর দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিজের জিম্মায় নিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জাপানি মা নাকানো এরিকো।
গত ২১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়, তবে জাপান থেকে এসে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দুই সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। জাপানি মায়ের আসা-যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার সব খরচ বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত বলেন, রিটটি চলমান থাকবে। দুই মেয়ে বাবা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে। মা দেখা-সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। যেহেতু মা জাপানি নাগরিক, সেখানে থাকেন এবং কাজ করেন, তাই তিনি নিজের সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে সন্তানদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন করে সময় কাটাতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে যাওয়া-আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। এর বাইরে আসা-যাওয়ার খরচ মা বহন করবেন। ছুটির দিনে অন্তত দুইবার বাবা সন্তানদের মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন।
এ ছাড়া আদালত নির্দেশনা দেন, গত কয়েকমাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত খরচ বাবদ শিশুদের মা নাকানো এরিকোকে ১০ লাখ টাকা দেবেন বাবা ইমরান শরীফ। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাকে এ অর্থ দিতে হবে। রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য আদালতে উভয়পক্ষ আসতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবেন। প্রতি তিন মাস অন্তর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে।
এদিকে জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বাবার পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবী ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন।
গত ১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তার বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবেন নাকি মা নাকানো এরিকোর সঙ্গে জাপানে চলে যাবেন সে বিষয়ে শুনানি শেষ হয়।
গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন বাবা-মাসহ রাজধানীর গুলশানের চার কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় থাকবে জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। সেখানে তারা আপাতত ১৫ দিন থাকবে। ফ্লাটের ভাড়া উভয়পক্ষ বহন করবে।
পরে ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন রাজধানীর গুলশানের ফ্লাটে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনার সঙ্গে জাপানি নাগরিক মা নাকানো এরিকো রাতসহ ২৪ ঘণ্টা থাকবেন। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ শুধু দিনের বেলা সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এই সময়ে ওই ফ্লাটের ভাড়া শিশুদের বাবা-মাকে সমানভাবে বহন করতে হবে। আদেশ অনুযায়ী এতদিন বাবা-মা শিশুদের সঙ্গে অবস্থান করে আসছিলেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঢাকার ডেপুটি ডিরেক্টর তাদের তত্ত্বাবধান করবেন। প্রয়োজনে এ কর্মকর্তা ওই ফ্ল্যাটে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। গুলশানের বাসায় থাকাকালীন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বলা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়
পরে নাকানো এরিকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে বেড়ানো বা মার্কেটে যাওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারবেন জাপানি।