জাপানি নারীর দুই সন্তানকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশ
জাপানি নারী চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬) তাঁর দুই শিশু সন্তানকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরীফ ইমরান বিচ্ছেদের পর ওই দুই শিশুকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। জাপান থেকে বাংলাদেশে এসে নাকানো এরিকো আজ বৃহস্পতিবার সকালে দুই কন্যাসন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স রিট করেন।
রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি শিশু দুটির এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। হাইকোর্ট রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদেশের শেষে আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। তারা হচ্ছে জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)। তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের সঙ্গে এরিকোর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান শরীফ আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে শরীফ ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান বলে রিটে উল্লেখ করা হয়।
আইনজীবী আরও জানান, গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে নাকানো এরিকোর কাছে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু নাকানো এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিতে আদেশ দেন। কিন্তু শরীফ ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এদিকে গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে এরিকো বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন।
এরপর নাকানো এরিকো গত ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে এসে এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও শরীফ ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাঁকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান।
আইনজীবী আরও জানান, গত ২৭ জুলাই নাকানো এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।