জাপানি মায়ের সঙ্গে শিশুদের বেড়ানোর অনুমতি বহাল
জাপানি শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে মা নাকানো এরিকোর বেড়ানোর অনুমতি ও শিশুদের সঙ্গে একই কক্ষে চার দিনরাত থাকার আদেশ বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শিশুদের বাবার আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এই আদেশ দেন।
আদালতে শিশুদের বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। জাপানি মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে গতকাল বুধবার হাইকোর্ট আদেশ দেন দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে বেড়ানো বা মার্কেটে যাওয়ার উদ্দেশে বাইরে যেতে পারবেন জাপানি মা চিকিৎসক নাকানো এরিকো। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফও সন্তানদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে পারবেন। এ ছাড়া ৯, ১১, ১৩ ও ১৫ সেপ্টেম্বর শিশুদের সঙ্গে রাতে থাকবেন মা। বাকি দিনগুলোতে বাবা-মা উভয়ই আগের নির্দেশ অনুযায়ী শিশুদের সঙ্গে থাকবেন। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত।
জাপানি নাগরিক চিকিৎসক নাকানো এরিকোকে নিয়ে অপপ্রচার-সংক্রান্ত সব কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়া এসব ভিডিও কনটেন্ট তৈরির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ও সাইবার টিমকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার জাপানি মা চিকিৎসক নাকানো এরিকোকে নিয়ে অপপ্রচার সংক্রান্ত সব কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
দুই শিশুর জাপানি মায়ের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ আবেদন করেন।
আইনজীবী জানান, আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মা-বাবাসহ রাজধানীর গুলশানের চার কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় রয়েছে জাপানি দুই শিশু। মা এরিকো শিশুদের নিয়ে বাইরে যেতে চাইলেও, বাবা রাজি না হওয়ায় বাইরে যেতে পারছেন না। এ কারণে মার্কেটে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়।
এর আগে গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন মা-বাবাসহ রাজধানীর গুলশানের চার কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় থাকবে জাপানি দুই শিশু। সেখানে তারা আপাতত ১৫ দিন থাকবে। ফ্লাটের ভাড়া উভয় পক্ষ বহন করবে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঢাকার ডেপুটি ডিরেক্টর তাদের তত্ত্বাবধান করবেন। প্রয়োজনে এ কর্মকর্তা ওই ফ্ল্যাটে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। গুলশানের বাসায় থাকাকালীন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বলা হয়েছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত। তবে এ সময়ে হাইকোর্ট পুরো বিষয়টি নজরে রাখবেন।
দুই মেয়েকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে গত ১৯ আগস্ট সকালে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে মেয়েদের নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী।
ওই দিন জাপানি দুই শিশু এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
কিন্তু, এর মধ্যেই ২২ আগস্ট ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়ে দুটিকে হেফাজতে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ বিষয়টি ২৩ আগস্ট সকালে হাইকোর্টের নজরে আনেন তাদের বাবার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম।
আদালত দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন। এ সময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন বলে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে আদালত ওইদিন উভয় পক্ষের আইনজীবীদের ৩১ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখতে বলেছিলেন। তবে, ৩০ আগস্ট রাত পর্যন্ত আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কয়েক দফা বৈঠক করেও দুই পক্ষ কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি।