জামাকাপড়-বইপত্রে ছেলে আবরারকে খোঁজেন মা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যার দুই বছর আজ। হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন। কুষ্টিয়ার পিটিআই রোডের বাসায় প্রতিনিয়ত আবরার ফাহাদ রাব্বীর জামা-কাপড়, বইপত্র ও ব্যবহৃত জিনিসপত্রে প্রিয় ছেলেকে খোঁজে ফেরেন মা।
রোকেয়া খাতুন আজ বুধবার বলেন, ‘সবাই দেখেছে আমার ছেলে আবরারকে কত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দুই বছর অতিবাহিত হলেও আমার ছেলের হত্যাকারীরা এখনও জীবিত রয়েছে। আবরারের হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে তখন তাদের পরিবার বুঝবে ছেলে হরানোর কতটা যন্ত্রণা নিয়ে আমি বেঁচে আছি।’ দ্রুত রায় ঘোষণার পাশাপাশি তা কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচারকাজ।
এদিকে, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেখে যেতে চান তাঁর দাদা মো. আব্দুল গফুর বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ সবাই বলেছেন, আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর হয়ে গেলেও এখনও বিচারকাজ শেষ হয়নি। আমার বয়স ৯০ বছর। মৃত্যুর আগে আমি আমার নাতি আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দেখে যেতে চাই।’
করোনা পরিস্থিতির কারণে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটেছে দাবি করে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ বলেন, ‘বিচারকাজে বিলম্ব হওয়ায় অনেকেই এই মামলাটিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। তাই অতিদ্রুত সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।’
আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর শুনানির জন্য পরবর্তীতে দিন রয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক মনির কামাল এই দিন নির্ধারণ করেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবু আব্দুল্লাহ মিঞা এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বিচারক অসুস্থ থাকায় যুক্তিতর্ক শুনানি হয়নি। এই কারণে ভারপ্রাপ্ত বিচারক নতুন দিন নির্ধারণ করেছেন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা।
মামলার ২৫ আসামি
মামলায় আসামিরা হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, উপসমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
আসামিদের মধ্যে মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক। বাকি ২২ জন গ্রেপ্তার আছেন। এ মামলায় আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বিবরণ
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয়ে আবেদন করেন নিহত আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। গত বছরের ১২ মার্চ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আবরার হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ফাইল অনুমোদন করেন।