জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ
সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতারা। তাঁরা বলেছেন, এটি মুক্তিযোদ্ধাদেরই অপমান করা। অন্যদিকে আল জাজিরার প্রতিবেদনকে সরকার রাজনৈতিক বুলি দিয়ে আড়াল করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করে দলটি।
কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় সম্প্রচারিত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা প্রতিবেদন প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতেই আজ বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল।
তবে সে প্রসঙ্গ ছাপিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে, সামনে চলে আসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গটি। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলছে, এমন সিদ্ধান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই, তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এটার সরকারের সিদ্ধান্ত এখনো হয় নাই। যদি হয়, তাহলে এটা মুক্তিযুদ্ধের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অসম্মান, অপমান ও অবমাননা হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এর আগে আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক বুলির আড়ালে দায়সারাভাবে প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু চাপা দিতে চাইছে সরকার।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গোপনীয়তা লঙ্ঘনে আড়িপাতার সিগন্যাল সরঞ্জামাদি আমদানির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নাম ব্যবহারের সরকারের ব্যাখ্যা জাতিসংঘ কর্তৃক বাতিল হওয়ার পর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বৃহত্তর অংশীদার হিসেবে এখন ওই দায়িত্বে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টতাই অনিশ্চয়তায় পড়বে।’
আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে সাতটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের নিজস্ব পদ্ধতিতে যে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। একই সঙ্গে জাতিসংঘকে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
লিখিত বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আল জাজিরার প্রতিবেদন সুশাসনের অভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন তথা দুঃশাসনের এক বিশাল ক্যানভাসের কেবলই ক্ষুদ্র চিত্র। রাষ্ট্রক্ষমতার চরম অপব্যবহার ও মাফিয়া সংস্কৃতির এক অতি ক্ষুদ্রাংশ। রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতার দখলদারত্ব অব্যাহত রাখার ভয়ানক প্রক্রিয়ার এক অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ এবং লাগামহীন সাগরসম দুর্নীতির একটি ‘টিপ অব দি আইসবার্গ’মাত্র।
সাবেক এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শীর্ষক প্রচারিত প্রতিবেদনে সরকার প্রধানের পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে তথ্য প্রমাণসহ নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারি সব প্রতিবাদ বিবৃতিতে প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগসমূহের সুনির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে রাজনৈতিক বুলির আড়ালে অভিযোগসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন কি জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকেও অপরাধ আড়ালের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।