জুডিশিয়ারির কোমর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে
গাইবান্ধা-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাবেক প্রধান বিচারপতির বিচার হচ্ছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের পরিবর্তন করা হচ্ছে, তিনজন বিচারপতিকে জুরিসডিকশন থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য উইংয়ে তো কিছুই হচ্ছে না। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদে এক বক্তব্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির এ সাংসদ বলেন, ‘এখানে আমার মনে হচ্ছে, জুডিশিয়ারিকে আরও দুর্বল করার ও ডিমোরালাইজড করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জুডিশিয়ারির কোমর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আমি মাননীয় মন্ত্রীকে বলব, জুডিশিয়ারিকে শক্তভাবে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করাতে হবে।‘’
তিন মিনিটের বক্তব্যে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘২০১৯ সালে ৭১৭ জন বিচারককে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু পদায়ন করা হয়েছে মাত্র ৩৩৫ জনকে, বসিয়ে রাখা হয়েছে ৩২০ জনকে। একসাথে পদোন্নতি পেয়েও পদায়ন না হওয়ার অপেক্ষায় তিন বছর পার করেছেন এসব বিচারক। এ ছাড়া গত বছর যাদের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে; এক বছরেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এবং পরের পরীক্ষাগুলোও সম্পন্ন হয়নি। এসব ক্ষেত্রে স্ট্যাবিলিটি, ফাইন্যান্স ঘুরে আসতে আসতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেধে যায়। তাই আইন মন্ত্রণালয়কে স্বাধীন করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠন করতে হবে।’
ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি প্রসঙ্গে জাপার এ সাংসদ বলেন, দেশের বিচার বিভাগের ৫০ বছরে কোনো আপিল বিভাগের রিভিউতে রায় পরিবর্তন হয়েছে এমন কোনো নজির নেই। সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে বিচারিক ক্ষমতা না দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সংবিধানে তাদের ইমপিচমেন্ট করার বিধান না থাকায় বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। এখন এ তিনজন বিচারপতিকে বসিয়ে বসিয়ে বেতনভাতা সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না, আবার কাজেও দেওয়া যাচ্ছে না। এতে করে বিচারপতিরা মানসিকভাবে দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিচার বিভাগে হতাশা বাড়ছে। আমার মনে হয়; প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলে তাদের বেঞ্চ দেওয়া যেতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
মাসদার হোসেন মামলার আলোকে স্বাধীন বিচার বিভাগ নিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, অধস্তন আদালত, ম্যাজিস্ট্রেটগণ স্বাধীনভাবে কাজ করবেন। কিন্তু আমি মাননীয় আইনমন্ত্রী মহোদয়কে বিনীতভাবে বলতে চাই; কিছুদিন আগে তিনি একজন অধস্তন আদালতের একজন নারী বিচারকের (মোছা. কামরুন্নাহার) বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, তার বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার জন্য। ওই বিচারক তো রায় এখনো প্রকাশ করেননি। তাহলে তিনি কিসের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতিকে এই চিঠি দিলেন? দ্বিতীয় বিষয়টি সংবিধান অনুযায়ী একজন আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে এ ধরনের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করতে পারেন কিনা? এটি তাঁর এখতিয়ার আছে কিনা? এ ধরনের অনুরোধ তো অুনরোধ না, বরং অর্ডার। এ ধরনের অর্ডার জুডিশিয়ারির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।’
জাতীয় পার্টির সাংসদ বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাবেক প্রধান বিচারপতির বিচার হচ্ছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের পরিবর্তন করা হচ্ছে, তিনজন বিচারপতিকে জুরিসডিকশন থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক বেশি বিচার করা হচ্ছে বিচারকদের। কিন্তু অন্যান্য উইংয়েতো হচ্ছে না।’
সংসদে জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চুন্ন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানির কী অবস্থা? এটি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে কয়েকজন বিচারপতিকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি দয়া করে আইনমন্ত্রী জানাবেন।