জেলা বিএনপির পদ পেতে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন নেতারা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। কে হচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে আলোচনা।
নানা হিসাবনিকাশ ও মেরুকরণও চলছে পদপ্রত্যাশী এসব নেতাদের নিয়ে। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন নানামুখী তৎপরতায়। আর পদপ্রত্যাশী নেতারা ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে। একজন আরেকজনকে ঘায়েল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে করছেন অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষ্যে উপজেলা ও পৌর কমিটিও গঠন করা হচ্ছে।
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, জেলার শীর্ষ দুটি পদে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মনোনীতদেরই ঠাঁই হবে। এজন্য তারা তারেক রহমানের গুডবুকে নাম লেখাতে চেষ্টা করছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে শোনা যাচ্ছে অনেকের নাম। সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি রোমানা মাহমুদ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, জেলা বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, জেলা বিএনপির বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নুর কায়েম সবুজ।
তবে সভাপতি পদে রোমানা মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে মির্জা মোস্তফা জামানের নাম আলোচিত হচ্ছে বেশি। এই দুজনই আগামী কমিটিতে নেতৃত্বে আসবেন বলে বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান স্বচ্ছ ইমেজের নেতা। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সব মহলে প্রশংসিত। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তার অনেক সুনাম রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। তার বাবা সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মির্জা মোরাদুজ্জামান। আর রোমানা মাহমুদ সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সহধর্মিণী। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা সবাই দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা। আন্দোলন সংগ্রামে তাদের অবদান রয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক মামলার আসামি ও কারাবরণ করেছেন। স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতন আন্দোলনে তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। পদের জন্য একাধিক নেতা লড়াই করলেও সবাই তাকিয়ে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে।
আন্দেলন ও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা। দলের প্রতি যাদের আনুগত্য রয়েছে তাদের দিয়েই আগামীদিনের কমিটি হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে বর্তমান জেলা বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড নেতাদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে অর্থ লেনদেন করা হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে জানেন বলে তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন। এজন্য আগামী কমিটিতে দলের ত্যাগী ও স্বচ্ছ নেতাদের স্থান দেওয়ার দাবি তৃণমূল নেতাদের।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, আন্দেলন ও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করে চলেছি। আগামীতেও কাজ করতে চাই। জেলা বিএনপিতে কে নেতৃত্বে আসবেন, তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভালো জানেন। তিনি যদি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে আমাকে দায়িত্ব দেন আমি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। তারেক রহমান যে কমিটি উপহার দেবেন আমি তা সাদরে গ্রহণ করব।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান বলেন, ২২ বছর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। দলকে সুসংগঠিত করেছি। তৃণমূল নেতাকের্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। সবাই আমাকে চিনে ও জানে। এ কারণে নেতাকর্মীরা আমাকে চাইতে পারে। দল যদি আমাকে দায়িত্ব দেয় তাহলে কাজ করে যাব। তবে আমি কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।
সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আকবর আলী বলেন, দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে আছি। আন্দোলন করেছি, জেলেও গেছি। তবে আগের দলের সঙ্গে এখনকার দলের তুলনা হয় না। বর্তমানে জেলা বিএনপির অনেক নেতাই বিতর্কিত। তাদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ রয়েছে। তারা বিকাশ নেতা হিসেবে পরিচিত। তাদের সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না। দলের স্বচ্ছ ও ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব দিলে দল গতিশীল হবে। আন্দোলন সফল হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।