জেসমিনের ছেলে ও ভগ্নিপতিকে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদ
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর মৃতুর ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গঠিত তদন্তদল তাঁর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
আজ সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত র্যাবের তদন্তদল জেসমিনের ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত ও তাঁর ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলামকে সার্কিট হাউসে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জেসমিনের ছেলে ও ভগ্নিপতি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাবের তদন্তদলের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়িয়ে সার্কিট হাউসের পেছনের সিঁড়ি দিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা গাড়িতে উঠে সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন।
র্যাব সদস্যরা চলে যাওয়ার পর সার্কিট হাউস থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন জেসমিনের ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত।
ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত ২২ মার্চ সুলতানা জেসমিনকে র্যাব সদস্যরা আটকের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাঁকে নওগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাঁকে নওগাঁ থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ মারা যান তিনি।
আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেহেতু আমি ও সৈকত জেসমিনের সঙ্গে ছিলাম। এই সময়ের মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তাই বর্ণনা আকারে আমাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন তাঁরা। তদন্তদল আমাদের দুজনের বক্তব্য লিখিত আকারে গ্রহণ করেছে।’
আদালত, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদ বা মায়ের মৃত্যু নিয়ে কিছু না বললেও মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করতে চান বলে সাংবাদিকদের জানান সুলতানা জেসমিনের ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত।
এর আগে গত রোববার বিকেলে সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরসেনিক বিভাগ।
এ বিষয়ে গতকাল রোববার রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে এর বেশি কিছু জানি না। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জেসমিনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কী উঠে এসেছে, তা নিয়ে কেউ কথা বলছে না। আদালতে প্রতিবেদন পৌঁছানোর আগে স্পর্শকাতর এই বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলবে না।’
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে শুনলাম যে রিপোর্ট এসেছে। কী রিপোর্ট এসেছে, সেটা আমি জিজ্ঞেস করিনি। রিপোর্ট কোর্টে গেলে সবাই জানতে পারবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুভাষ চন্দ্র বর্মণ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার কথাই অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি রিপোর্ট পাইনি। আমি কিছু বলতে পারব না।’
এদিকে র্যাব হেফাজতে নির্যাতন নয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে জেসমিন সুলতানার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় ও ময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. কফিল উদ্দিন।
আজ সোমবার ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, জেসমিনের মাথায় অতিরক্তি রক্ত ক্ষরণের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বড় কোনো আঘাত নেই। মাথায় ও হাতে যে আঘাত পাওয়া গেছে, সে আঘাত মৃত্যু হওয়ার মতো নয়।
গত ২২ মার্চ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মী নওগাঁ শহরের জনকল্যাণপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র্যাব। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরের দিন ২৩ মার্চ বিকেলে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন শুক্রবার মারা যান তিনি। আটকের পর র্যাব হেফাজতে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।