জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর
র্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রোববার (৩ এপ্রিল) বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
ময়নাতদন্তে জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী উল্লেখ করা হয়েছে, জানতে চাইলে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্তের সবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বোর্ডের তিনজন বসে রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে মতামত দিয়েছি।’
যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আনিসুর রহমান তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রাজপাড়া থানার এসআই সুভাষ চন্দ্র বর্মণের সঙে্গ যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান। তিনি আরএমপির মিডিয়া উইংয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘এটি জুডিসিয়াল ডকুমেন্ট। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
এদিকে, মৃত জেসমিনের মামা নাজমুল হক মন্টু বলেন, ‘জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর হাইকোর্ট কী নির্দেশনা দিচ্ছেন তার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। হাইকোর্টের মন্তব্য জানার পর আমরা মামলার সিদ্ধান্ত নেব।’
যদিও নাজমুল হকের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণেই জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে নিয়েই র্যাব এ অভিযান চালায়।
এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্নজনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
আটকের পর ২৪ মার্চ সকালে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। জেসমিনের মৃত্যুর পরদিন ২৫ মার্চ রামেকের মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেসমিনের মরদেহ গোসল করানো হয় রাজশাহীতেই। পরে কাফন পরানো মরদেহ কফিনে করে নওগাঁয় নিয়ে যায় র্যাব। সেখানে র্যাবের উপস্থিতিতেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনেরা।
জেসমিনের মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা একটি মামলার কথা জানা যায়, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকেল। জেসমিন ও তাঁর কথিত সহযোগী আল-আমিনকে এতে আসামি করা হয়। আল-আমিনকে ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট।
এদিকে, জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের ১১ জনকে রাজশাহী ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আনা হয়েছিল। র্যাবের গঠিত একটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। র্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, তদন্ত কমিটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। রোববারও তারা কাজ করেছেন। তদন্ত শেষে কমিটি ঢাকায় ফিরে র্যাব সদর দপ্তরে প্রতিবেদন দেবে।
এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত যুগ্ম সচিব এনামুল হক একটি প্রতারণা মামলার আসামি। চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে ঢাকায় ওই মামলা হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। এনামুল এখন দাবি করছেন, জেসমিন তাঁর নামে প্রতারণা করতেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, জেসমিনের সঙ্গে পূর্বপরিচয় ছিল এনামুলের। জেসমিনকে আটকের আগেও তিনি নওগাঁয় গিয়েছেন। অন্য মোবাইলফোন নম্বর থেকে তাদের কথাও হতো। গোয়েন্দা সংস্থা দুজনের কললিস্ট যাচাই করে দেখছে। যদিও এনামুল হক দাবি করেন, জেসমিনকে তিনি আগে কখনও দেখেননি। তাদের পরিচয়ও ছিল না।
জেসমিনকে আটক ও তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন এসেছে। প্রতিবেদনটি এখনও পর্যালোচনা করে দেখা হয়নি। তাই গণমাধ্যমে বলার মতো কোনো কথা নেই।’