জ্বলছে সীতাকুণ্ড, বাতাসে লাশের গন্ধ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণের প্রায় ২৮ ঘণ্টা। এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। জ্বলছে। একই সঙ্গে পুড়ছে নিহত ও আহতদের স্বজনদেন মন। স্তব্ধ অনেকে। হাসপাতালের এখানে সেখানে ছুটে খুঁজছেন ছেলে, বাবা অথবা নিকট আত্মীয়কে। বাতাসে এখন পোড়া লাশের গন্ধ। এদিকে, এ ঘটনায় নিহত ১১ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অচেনা মরদেহ শনাক্তে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে ডিএনএ টেস্ট। আর রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১৪ জনের মধ্যে দুজনকে নেওয়া হয়েছে আইসিইউতে। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
জানা যায়, এখনও কনটেইনারের ভেতরে আগুন জ্বলছে। দুটি কনটেইনারে শক্তিশালী কেমিক্যাল থাকার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও এরই মধ্যে চলছে উদ্ধার কাজ। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ বিশেষ টিম কাজ করছে। তবে, আগুন ডিপো এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শনিবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় তারা। এরপর তাদের আটটি ইউনিট কাজ শুরু করে। কিছু পরে ঘটনাস্থলে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের আরও সাতটি ইউনিট। ভোরের দিকে আশপাশের জেলা থেকে পাঁচটিসহ ১০টি ইউনিট যোগ দেয়। তবে, বিস্ফোরণ অব্যাহত থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দীর্ঘক্ষণ আশপাশে যেতে পারেননি। এর সঙ্গে যোগ হয় পানির স্বল্পতা। ডিপোতে কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
এ অগ্নিকাণ্ডে ১০ পুলিশসহ দেড় শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। নাশকতা কি না প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন ডিপো পরিচালক। এ ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ডিপোতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পেছনে মনিটরিং টিমের অবহেলা ছিল বলে প্রাথমিক ধারণার কথা জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আজ রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ১৪ জনকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে নেওয়া হয়েছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইউব হোসেন রোববার রাত ৯টার দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪ জন দগ্ধ রোগীকে আনা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মাকফুরুল নামে একজনকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) নেওয়া হয়েছে। তাঁর শরীরের ৬৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া এসআই কামরুলের শরীরের ৩৭ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খালেদুর রহমান নামে আরেকজনকেও জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে। তাঁর শরীরের ১২ শতাংশ পুড়েছে।’
সন্ধ্যায় দগ্ধ যেসব রোগীকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে তাঁরা হলেন—কন্টেইনার ডিপোর সিকিউরিটি ইনচার্জ মাইনুল হক চৌধুরী, শ্রমিক আমিনুদ্দিন, ড্রাইভার ফারুক হোসেন ও মোহাম্মদ রাশেল, ফায়ার ফাইটার রবিন মিয়া ও গাউসুল আজম, মাসুম মিয়া, নরসিংদী ফরমানুল ইসলাম, ড্রাইভার রুবেল মিয়া, ফারুক হোসেন ও মহিবুল্লাহ।
বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডাক্তার সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘যেসব দগ্ধ রোগীকে এখানে আনা হয়েছে তাদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক। দু’একজন ছাড়া সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে (ইনহেলিসন বার্ন)। তাঁদের মধ্যে দুজন ফায়ার ফাইটারকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।’