জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত থাকবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দেশে জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুলের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের চাহিদাপূরণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের জন্য ছয় মাসভিত্তিক চুক্তি হয়ে থাকে। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মজুত জ্বালানি তেল দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের চাহিদাপূরণ করা সম্ভব হবে। এসময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল নিয়ে দুটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছাবে। অর্থাৎ, নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।’
এ সময় জ্বালানি তেলের মজুতের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের মজুতের পরিমাণ পরিশোধিত ছয় লাখ ২০ হাজার ১৪৮ মেট্রিকটন, অপরিশোধিত ৮১ হাজার ৮৪৬ মেট্রিকটন। মোট মজুত সাত লাখ এক হাজার ৯৯৪ মেট্রিকটন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের চাহিদাপূরণের লক্ষ্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে ডিজেল, জেট ফুয়েল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েল ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড ও মারবান ক্রুড অয়েল আমদানি করে থাকে।’
তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাহিদা বিবেচনায় চলতি আগস্টে প্রায় তিন লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, ৫০ হাজার মেট্রিকটন জেট ফুয়েল ও ৫০ হাজার মেট্রিকটন অকটেন ও সেপ্টেম্বরে প্রায় তিন লাখ মেট্রিকটন ডিজেল, ২০ হাজার মেট্রিকটন জেট ফুয়েল, ৫০ হাজার মেট্রিকটন ফার্নেস অয়েল ও ২৫ হাজার মেট্রিকটন অকটেন আমদানির সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় আগস্টে আরও ২৫ হাজার মেট্রিকটন ফার্নেস অয়েল ও সেপ্টেম্বরে আরও ২৫ হাজার মেট্রিকটন ফার্নেস অয়েল ও এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন ডিজেল সরবরাহের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের মাধ্যমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের জন্য আগস্টে প্রায় দুই লাখ মেট্রিকটন ও সেপ্টেম্বরে প্রায় এক লাখ মেট্রিকটন ক্রুড অয়েল আমদানি করা হবে। তা ছাড়া দেশীয় উৎস হতে জ্বালানি তেল সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জুলাইয়ে ক্রুড অয়েলের মূল্য ব্যারেল প্রতি সর্বোচ্চ ১১৭ দশমিক ৪৮ মার্কিন ডলার অতিক্রম করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় গত ৬ এপ্রিল ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৮৩ রুপি ও পেট্রলের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৫ দশমিক ১২ রুপি নির্ধারণ করা হয়। পরে শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে ২২ মে কলকাতায় ডিজেল লিটারপ্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি ও পেট্রল লিটারপ্রতি ১০৬ দশমিক শূন্য তিন রুপি নির্ধারণ করা হয়, যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। গত ৪ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় ডিজেল লিটারপ্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৭ দশমিক ৩৪ টাকা (এক রুপি সমান এক দশমিক ২৬৫ টাকা) বিক্রয় হচ্ছিল। ওই সময়ের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের চেয়ে লিটারপ্রতি ৩৭ দশমিক ৩৪ টাকা বেশি দামে কলকাতায় ডিজেল বিক্রি হচ্ছিল। ওদিন কলকাতায় পেট্রলের দাম ছিল ১০৬ দশমিক শূন্য তিন রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৩৪ দশমিক ১৩ টাকা। ৪ আগস্টের হিসাবে বাংলাদেশের চেয়ে কলকাতায় ৪৮ দশমিক ১৩ টাকা বেশি দামে পেট্রল বিক্রি হচ্ছিল।’