ঝিনাইদহে করোনায় আরও তিনজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৩২ জন
ঝিনাইদহে প্রতিদিন মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে আরও ১৩২ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
আজ শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদ জাহাঙ্গীর হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে শৈলকূপা উপজেলার ফলহরি ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে ১২ দিনের ব্যবধানে এক বাড়িতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা আতঙ্কে ওই এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ২০ জুন মৃত্যুবরণ করে ওই গ্রামের খলিলুর রহমান হিরনের ১৪ বছর বয়সের ছেলে জিহাদ। গত ২৪ জুন জিহাদের মা রোকসানা বেগম (৪৮) এবং আজ শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে মারা যান জিহাদের নানা মাহাবুব হোসেন (৬৫)। মাহাবুব হোসেনের মরদেহ ঘরে খাটের ওপর পড়ে থাকে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা। মরদেহ ফেলে রেখে আতঙ্কিত পরিবারের সবাই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। গ্রামের লোকেরাও লাশ দাফন-কাফনের জন্য এগিয়ে আসেনি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামিনুর রহমান বিপুল বলেন, দুটি পরিবার পাশাপাশি বসবাস করে। তিনি আরও জানান, মৃত মাহাবুব হোসেনের অ্যান্টিজেন রিপোর্টে করোনা পজিটিভ হয়েছে। পরিবারের লোকসংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পরিবারে আরও অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে। ইসলামি ফাউন্ডেশনের দাফন কমিটির সদস্যরা জুম্মার নামাজ শেষে গ্রামের কবরস্থানে মাহাবুবের লাশ দাফন করেছেন বলেও জানান চেয়ারম্যান।
চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) ডা. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৫২ জন করে করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে অক্সিজেন দেওয়া লাগছে না এমন রোগীদের প্রতিদিন গড়ে ৪০ জনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে অতি ঝুঁকিপূর্ণ রোগী ছাড়া কাউকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। এ কর্মকর্তা আরও জানান, দু-একদিনের মধ্যে কোভিড ইউনিটের জন্য আরও ৫০টি বেড বাড়ানো হবে। এতে সর্বোচ্চ ১৫০ জন রোগী ভর্তি করা যাবে। এর বেশি হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মরণাপন্ন করোনা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য হাই-ফ্লো নাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে বর্তমানে অনুদান হিসেবে পাওয়া ১৪টি হাই-ফ্লো নাজাল ক্যানোলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ১২টির মধ্যে ১০টি দিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা ১০ জনের অক্সিজেন চালু রাখা হয়েছে। জেলার এ হাসপাতালে তরল অক্সিজেন ট্রাঙ্ক রয়েছে একটি। ওই ট্যাঙ্কে মাত্র পাঁচ হাজার লিটার অক্সিজেন মজুদ রাখা যায়। যা চার-পাঁচ দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো না হলে অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সূত্রটি। সূত্র মতে, ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে করোনা বিভাগে ভর্তি আছে ১২০ জন।
এ রিপোর্ট লেখার সময় সন্ধ্যা ৬টায় ইসলামি ফাউন্ডেশন ঝিনাইদহের উপপরিচালক মো. আব্দুল হামিদ খান জানান, আজ শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন জেলা শহরের চাকলাপাড়া এলাকার আনোয়ারুল কাদের এবং সকাল ১১টার দিকে মহেশপুরের মথুরানগর গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম (৬৫) নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তিনি আরও জানান, আজ পর্যন্ত দাফন কমিটির সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ১০৮ জনের লাশ দাফন করেছেন।