ঝিনাইদহে করোনায় আরও তিনজনের মৃত্যু
ঝিনাইদহে করোনাভাইরাসে আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীসহ আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, করোনা সংক্রমণ বাড়ায় আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে জেলাব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।
মৃত তিনজন হলেন শৈলকুপা উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামের রাহেলা খাতুন (৫০) ও তাঁর স্বামী কৃষক নুর ইসলাম (৬০) এবং কালীগঞ্জ উপজেলার ফয়লা গ্রামের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল (৬৫)।
শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন এ খবর নিশ্চিত করে জানান, শৈলকুপায় বেলা ২টা পর্যন্ত আরও ১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আটজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ উপজেলার গ্রামাঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মিথিলা ইসলাম জানান, শিশুদের মধ্যে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রথম ধাপের তেমনটি হয়নি। ভারত থেকে আসা চারজনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে পাঁচ বছর সাত বছর বয়সের তিনজন শিশু রয়েছে। সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে তারা। এছাড়াও চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েক দিন আগে ১৪ বছর বয়সের এক প্রতিবন্ধি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
চলমান পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে ডা. মিখিলা আরও বলেন, ‘ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের স্থাপন করা হয়েছে ৭০ বেডের করোনা ওয়ার্ড। এতে করে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সব ধরনের অপারেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটির জন্য আটতলা বিশাল একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকায় ওই ভবনে রোগীদের থাকতে দেওয়া যাচ্ছে না।’
যে কারণে ২৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও এখনও ১০০ বেড হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে বলে মর্মে জানান তিনি।
সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডা. রেজাওয়ানা জানান, আজ দুপুর ৩টার পরে আরও দুজন করোনা পজিটিভসহ তিনকে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০ জনে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান শাখার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩০ জনের ফলাফল পজিটিভ এসেছে। আক্রান্তের হার ৪৭ দশমিক ৬১ ভাগ। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো তিন হাজার ৪২১ জনে। এছাড়াও ২৪ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭১ জন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। জেলার এক মাত্র কোভিড-১৯ হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ও সন্দেহভাজনদের (উপসর্গ) একত্রে রাখার কারণে সংক্রমণের ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। মৌসুমী সাধারণ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীরাও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় করোনা পজিটিভ ও সন্দেহভাজনদের আলাদা আলাদা ওয়ার্ডে রাখার পরার্মশ দেওয়া হয়েছে।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে এনটিভি অনলাইনকে আশ্বস্ত করেছেন।
সবশেষ ৭২ ঘণ্টায় মারা যান অন্তত ১১ জন। এ তালিকায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, দুইজন দিন মজুর ও তিনজন কৃষক রয়েছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঝিনাইদহের উপপরিচালক মো. আব্দুল হামিদ জানান, আজ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৮৭ জনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।