ঝিনাইদহে করোনা ও উপসর্গে সাতজনের মৃত্যু
ঝিনাইদহ ২৫০ বেডের হাসপাতালে স্বজনদের কান্নার আওয়াজ দূর থেকে ভেসে আসছে। কেউ মেঝেতে, কেউ বারান্দায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাফিয়ে উঠেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। আজ শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৪১ জনকে ভর্তি করা হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুর মুহাম্মদ ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শেরেগুল ইসলাম অন্যতম। করোনা পজিটিভ হওয়ার পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় মারা যান তারা।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে করোনায় চারজন ও উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম সূত্রে জানা গেছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩১ জন। আক্রান্তের হার ১৮ দশমিক ৬৭ ভাগ। গত শুক্রবার ছুটি থাকায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। যে কারণে আক্রান্তর সংখ্যা কমেছে।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘জ্বর, সর্দি ও কাশির লক্ষণ দেখা দেওয়ামাত্রই একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। সদর হাসপাতাল কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। বাড়িতে থেকে সাধারণ সর্দি-জ্বর ভেবে নিজেদের মত করে ওষুধ সেবন না করা এবং লক্ষণ দেখা মাত্রই আইসোলেশনে থাকা হলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে বলে মত দিয়েছেন তিনি। জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫১৩ জন।
অন্যদিকে, নিজ বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে তাদের নাম জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকায় রাখা হচ্ছে না। সেই সঙ্গে করোনা পজিটিভ রোগীদের অন্য হাসপাতালে রেফার করার পরে পথে মৃত্যু হলে হিসাব রাখে না স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে প্রকৃত মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে গড় হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, জেলা শহরের এইড কমপ্লেক্সে অবস্থান করা ভারত থেকে দেশে ফিরে আসা ২৫ জনের মধ্যে একজনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। তাকে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে, মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান বিপাশের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম, জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. রেজা সেকেন্দার ও সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যকার বৈঠক সফলভাবে শেষ হয়।
মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জামির মো. হাসিদুস সাত্তার এ খবর নিশ্চিত করেন। তিনি আরও জানান, ৪ জুলাই রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত ডা. নাফিজ সোবাহানের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ৬ জুলাই সকালের দিকে বিষয়টি নিয়ে সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সফলভাবে বৈঠক শেষ হওয়ার পরেও অজ্ঞাত কারণে কর্মরত ডা. নার্সদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে বিধায় প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়েছেন তারা।
প্রাপ্ততথ্য মতে, ভারত সীমান্ত সংলগ্ন মহেশপুর উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হিসেবে তালিকা ভুক্ত হয়েছেন মাত্র সাতজন। বাকিরা উপসর্গে মারা গেছেন মর্মে ধরা হয়েছে।