টাঙ্গাইলে পানিবন্দি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা নিয়ে সংশয়
টাঙ্গাইলে যমুনাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ আর রাস্তাঘাট পানির নিচে, সেসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার পর তা খোলার সিদ্ধান্ত হলেও স্কুলে যাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে পারে পানিবন্দি এসব বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অয়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের মাঠে এখনও কোমর সমান পানি প্রবাহিত হচ্ছে। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তাটিও হাঁটু পানির নিচে। আর বিদ্যালয়ের তিনটি ভবনের মধ্যে দুটির শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে। বসার ব্রেঞ্চগুলো বলতে গেলে পানির নিচে।
সদর উপজেলার চরগালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই অবস্থা। এ বিদ্যালয়ের মাঠে এখনও হাঁটুপানি রয়েছে। পশ্চিম দিকে একটি ভবনের প্রায় অর্ধেকটা রয়েছে পানির নিচে।
স্থানীয় বেশকিছু লোকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বন্যার পানি নেমে না গেলে ছোট ছোট শিশুদের স্কুলে পাঠানো ঠিক হবে না। কারণ মাঠে এখনও হাঁটুপানি রয়েছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পানি কমবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সদর উপজেলার ১৩ নম্বর মগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেও পানি জমেছে। সেখানে অবস্থিত মগড়া পালস ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ভবনের সামনে জাল দিয়ে মাছ ধরছে স্থানীয়রা। বিদ্যালয়ের পুরো মাঠটি পানির নিচে রয়েছে।
কালিহাতি উপজেলার দশকিয়া ইউনিয়নের সরকারি হাতিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মাঠ থেকে পানি নেমে গেলেও স্কুলজুড়ে কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে।
এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ পারভিন জানান, স্কুলের মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। কিন্তু এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা নদী পার হয়ে স্কুলে আসে। এ ছাড়াও স্কুলে আসার যে রাস্তাটি রয়েছে তা এখনও পানির নিচে রয়েছে। তারপরেও স্কুল খোলার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও শতভাগ আশা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এসব স্কুলের বেশকিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পানির মধ্যেও ওরা ক্লাসে ফিরতে আগ্রহী। এতদিন পর স্কুলে যাওয়ার জন্য পুরো প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাজন জানায়, অনেকদিন ধরে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। তাই যত কষ্ট হোক ১২ সেপ্টেম্বর থেকে তারা স্কুলে যাবে।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৩৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এখনও পানি রয়েছে। অপরদিকে ৮৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ের পানি নেমে গেলেও রাস্তাঘাট ও বসতবাড়িতে এখনও পানি থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ ক্লাসে না ফেরার সংশয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী আহসান বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত স্কুলগুলো নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যেকোনো উপায়ে ১২ সেপ্টেম্বর শতভাগ স্কুল খোলার চেষ্টা করা হবে।’
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাজাহান আনসারী বলেন, ‘বন্যাকবলিত স্কুলগুলোর পানি নামতে শুরু করেছে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে যাতে সবগুলো স্কুল খোলা যায় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’