টিকার এসএমএস পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা, গ্রেপ্তার চার
করোনাভাইরাসের টিকা পেতে দ্রুত মুঠোফোন বার্তা (এসএমএস) পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। মূলত বিদেশগামী যাত্রীদের লক্ষ করে এ প্রতারণার ফাঁদ পাতা চারজনকে রাজধানীর মুগদা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সারা দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ করছে সরকার। এ টিকা পেতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে এসএমএস পেতে হবে। আর ঠিক এ সুযোগে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।
র্যাব জানিয়েছে, দ্রুত এসএমএস প্রাপ্তির প্রলোভন দেখিয়ে আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল ওই চক্রের সদস্যরা। এরা মূলত বিদেশগামী যাত্রীদের লক্ষ করে এই প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। তবে, বিদেশগামী ছাড়াও এই ফাঁদে অনেকে পা দিয়েছেন বলে র্যাব জানতে পেরেছে।
খন্দকার আল মঈনের দাবি, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল এলাকা থেকে এই চক্রের নুরুল হক (৪৭), সাইফুল ইসলাম (৩০), ইমরান হোসেন (২৩) ও দুলাল মিয়াকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে বার্তা পাঠানোর কাজে ব্যবহৃত চারটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের এ পরিচালক বলেন, ‘সাধারণত বিদেশগামীদের টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতার সঙ্গে তাড়াও থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কারো টিকিট কাটা থাকে। তাদের টিকা নেওয়ার এই তাড়ার সুযোগে চক্রটি অর্থ আত্মসাতের সুযোগ নেয়। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে আড়াই থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।
‘প্রবাসীদের টিকা দেওয়ার জন্য সরকার সাতটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে। চক্রটি প্রবাসীদের টার্গেট করেই সেসব হাসপাতালের সামনে ঘোরাফেরা করতে থাকে। টিকা পেতে প্রবাসীরা নির্ধারিত হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। আর তখনই প্রতারক চক্রটি দ্রুত বার্তা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়’, যোগ করেন খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর অনেকে স্বাভাবিকভাবেই মুঠোফোন বার্তা পেয়ে যেতেন। তখন এই প্রতারকরা নিজেরা ক্রেডিট নিতেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদবির করে দুই-একটি মেসেজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা প্রলোভন দিয়ে কাজ না করিয়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন। আমরা দেখেছি, যারা দ্রুত বার্তা পেয়েছেন, তারা সাধারণত অভিযোগ করেননি। কিন্তু টাকা দিয়েও বার্তা না পেয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন আমাদের কাছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রের মূলহোতা আটক নুরুল হক। আটক সাইফুল ও ইমরান হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ভিকটিমদের দ্রুত মেসেজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। এরপর রাজি হলে তাদের নুরুল হকের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো, সেখানে টাকা নিয়ে নির্ধারণ করা হয়। টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ভিকটিমদের দুলালের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে কতদিনের মধ্যে মেসেজ পাবে সেই নিশ্চয়তা দেন দুলাল।
‘নুরুল দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন, ইমরান একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরিরত। সাইফুল রমনা এলাকার চা-বিক্রেতা, তিনি এক সময় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুলাল মিয়া একটি হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কর্মরত। তাদের অবস্থান ও পেশার কারণে বিদেশগামীদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়। তারা মুগদা, শাহবাগ, রমনা, শেরে-বাংলা নগর, মিরপুর, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় ছিল।’
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘আটক দুইজন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত থাকার সুবাদে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিচয় ছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা দুই-তিনজনের তথ্য পেয়েছি, যাদের মাধ্যমে তারা ১০-১৫টি বার্তা পাঠাতে পেরেছেন। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। তথ্য নিশ্চিত হব। তারপর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’