টিকার দ্বিতীয় ডোজ ৮ এপ্রিল, ঢামেক-কুর্মিটোলা দিয়েছে আগেই
নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগেই দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেছেন, ‘গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া ৬০ থেকে ৭০ জনকে আমরা দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিয়েছি।’
তবে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও পরিচালক (টিকাদান) ডা. শামসুল হক শনিবার রাতে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেলের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানেন না।
এদিকে আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান সংক্রান্ত দৈনিক হালনাগাদ তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত শুধু রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন ১০ জন ব্যক্তি। অন্য কোনো হাসপাতাল বা কেন্দ্রে কেউ দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেননি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিয়েছে, সেই তথ্য সেখানে নেই।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়ার তথ্য স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন। তিনি বলেছেন, ‘২৭ ও ২৮ জানুয়ারি যাঁরা করোনার প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিলেন, দ্বিতীয় ডোজের এই টিকা নেওয়ার অধিকার তাঁদের রয়েছে। তাঁরা হাসপাতালে গেছেন, টিকা নিয়েছেন।’
এই প্রতিবেদক করোনার প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিলেন গত ২৭ জানুয়ারি। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। টিকা গ্রহণের মাস দেড়েক পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একদিন মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানানো হয়, ‘আগামী ২৮ মার্চ আপনাকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হবে।’ তার কয়েকদিন পর টিকা গ্রহণের সময় জানতে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৮ মার্চ টিকা দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টিকা দেওয়া হবে ৮ এপ্রিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৬০ থেকে ৭০ জনের দ্বিতীয় ডোজের টিকার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।’
একই কথা জানিয়েছেন ডা. শামসুল হকও। তিনিও এই ব্যাপারে কিছু জানেন না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেছেন, ‘আমাদেরকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিতেও বলা হয়নি, আবার না দিতেও বলা হয়নি। প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমরা ২৮ জানুয়ারি টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের ২৮ মার্চ থেকে টিকা দিতে শুরু করি। এখন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ জনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। তারপর দেখলাম অন্য হাসপাতালে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে এরপর থেকে যাঁরা যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের ৭ এপ্রিলের পর যোগাযোগ করতে বলেছি।’
এদিকে টিকা সংকটের কারণে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ হচ্ছে বলে কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান) ডা. শামসুল হক বলেন, ‘এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ একই তথ্য জানিয়েছেন ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় কিনে আনা ৭০ লাখ আর ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেওয়া ৩২ লাখ ডোজ টিকা এসেছে বাংলাদেশ সরকারের হাতে। এই টিকার মধ্যে শনিবার পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৪ জন। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন ১০ জন। যদিও ঢামেক কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ৬০ থেকে ৭০ জনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিয়েছেন। অর্থাৎ, এই তথ্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান সংক্রান্ত দৈনিক হালনাগাদ তথ্যে নথিভুক্ত করা হয়নি।
দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গত ১ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেন।
টিকা গ্রহণের পর প্রতিমন্ত্রী জানান, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন। কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
সাধারণ জনগণকে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে এবং টিকা সংক্রান্ত গুজব ও অপপ্রচার প্রতিরোধ করতে মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে গত ২৮ জানুয়ারি তিনি করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন।
নিয়মানুযায়ী, গত ২৮ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করার কথা। কিন্তু, ঢাকার বাইরে থাকার কারণে তিনি ১ এপ্রিল টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেন।