টিকা নিলেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সব ধরনের ভয়-ভীতি ও শঙ্কাকে দূরে ঠেলে বাংলাদেশের মানুষ বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে টিকা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই সরকারের নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তবে, টিকা নেওয়ার পরও করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত মাস্ক পরাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারের নীতি নির্ধারকসহ বিশেষজ্ঞেরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওইদিন নার্স, চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ ২৫ জন টিকা নেন। পরদিন ২৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমইউ) হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে ৫৪১ জনকে টিকা দেওয়া হয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি পুরোপুরি টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও প্রথম দুই দিনে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। এজন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জটিলতাকেই দায়ী করেন আগ্রহীরা। ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে। ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের বিষয়ে প্রবল আগ্রহও তৈরি হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশের ৪৬টি সরকারি হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্য স্থাপনাকেন্দ্রে সর্বমোট দুই লাখ চার হাজার ৫৪০ জন টিকা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ টিকা নিয়ে সুস্থ আছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে, টিকা নেওয়ার পরও নিয়মিত মাস্ক পরাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারের নীতি নির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা। খ্যাতনামা চিকিৎসক অধ্যাপক ড. এ বি এম আবদুল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, দিন দিন টিকা গ্রহণ করতে আসা লোকের সংখ্যা বাড়ছে। টিকা নিলেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
ড. আবদুল্লাহ বলেন, ‘টিকা নিতে আসা লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। এটি দেখে আমাদের আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, টিকা নিলে অবশ্যই মানুষের শরীরে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি হবে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এর পাশাপাশি সুষম খাবারও গ্রহণ করতে হবে সবাইকে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ডা. দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা হচ্ছে, টিকা গ্রহণ করলেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না। কেননা, পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী করোনাভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে।’
করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মুকাদ্দিস হোসেন বলেন, ‘মাস্ক পরতে হবে এবং যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। এটি নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলার সুযোগ নেই।’
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘টিকা নিলেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাইরে বের হলে পরতে হবে মাস্ক। কিছুক্ষণ পরপর হাত ধোয়ার অভ্যাস অব্যাহত রাখতে হবে। এটা মনে করলে হবে না যে, আমি টিকা নিয়েছি তাই একদম নিরাপদ। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য অনস্পট নিবন্ধন সুবিধা আপাতত বন্ধ থাকবে। অনস্পট নিবন্ধন করে টিকা নেওয়ার সুবিধা নিতে অনেকেই টিকাদান কেন্দ্রে এসে ভিড় করছেন। ভিড় এড়ানোর জন্যই আপাতত এ সুবিধা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এখন প্রতিদিনই অনলাইনে মানুষ নিবন্ধন করছে। এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছে। শৃঙ্খলার সঙ্গে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্যই কেন্দ্রে এসে নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের সুযোগ আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে।’
অনস্পট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে টিকা গ্রহণে আগ্রহীদের সংখ্যাই বেশি উল্লেখ করে জাহিদ মালেক আরো বলেন, ‘এতে যারা আগে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে কেন্দ্রে এসেছেন, তাদের টিকা গ্রহণে অসুবিধা হচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধনকারীরা আগে কেন্দ্রে ঢুকতে পারছেন না। বয়স্ক লোক, চিকিৎসক, নার্সদের অসুবিধা হচ্ছে। এ কারণে আমরা এখন অনস্পট রেজিস্ট্রেশন আর করব না। যারা নিবন্ধন করে কেন্দ্রে যাবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা নিয়ে মানুষের দ্বিধা কেটে গেছে। দিন দিন মানুষের মাঝে টিকা নেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। যেসব জায়গায় আগে ভিড় কম ছিল, এখন সেখানেও টিকা নিতে অনেক মানুষ ভিড় করছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘নানা ধরনের গুজব ও সমালোচনা থাকার পরও মানুষ এগুলোকে আমলে না নিয়ে টিকা দিতে কেন্দ্রে আসছে।’