টেকনাফে পাহাড় ধসে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ৬ জন নিহত
কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালীত পাহাড় ধসে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ও রাত ৩টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজার পাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
গত তিন দিনে টানা বর্ষণে জেলার ২০টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড়ের খাদে অবস্থিত বাড়িতে পাহাড়ের খণ্ড ধসে পড়ে। এতে মাটির নিচে চাপা পড়ে যায় ওই এলাকার সৈয়দ আলমের ঘুমন্ত পাঁচ সন্তান। সকালে প্রথমে দুইজন ও পরে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মাটিচাপা পড়ে দুজন আহত হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, পাহাড় ধসে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভিলেজার পাড়ার সৈয়দ আলমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অপরদিকে, মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে হোয়ানক ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজোয়ার ঘোনা গ্রামে পাহাড় ধসে পড়ে এক বৃদ্ধ মারা যান। পাহাড়ের অংশ পাশের ঘরের দেয়ালে পড়লে মাটির নিচে চাপা পড়েন বৃদ্ধ আলী হোসেন। সকালে মাটি খুঁড়ে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় বাড়ির আরও তিনজন আহত হয়। এ ছাড়া পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে ওই বাড়ির একটি গরু ও একটি ছাগলও মারা যায়।
গত তিন দিন ধরে কক্সবাজার জেলায় টানা বর্ষণ চলছে। এরই মধ্যে গতকাল সকালে উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পাহাড় ধসে দুই পরিবারের পাঁচজন এবং শরণার্থী শিবিরে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পাহাড় ধসে শরণার্থী শিবিরের ৫০টিরও বেশি ঘর বিধ্বস্ত হয়। গতকাল মঙ্গলবার মহেশখালী উপজেলায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে এক নারী নিহত হন। টেকনাফে ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে আরও একজন মারা যান।
এ ছাড়া টানা বর্ষণে কক্সবাজার জেলার সদর, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া, উখিয়া টেকনাফ ও মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ২০টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রাম। এসব গ্রামের এক লাখেরও বেশি মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, কক্সবাজারে টানা ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে সচেতনতা অভিযান শুরু করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
আজ সকাল থেকে কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, রাডার স্টেশন ও সার্কিট হাউজের পাহাড়ের নিচের এলাকায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছৈয়দ মুরাদ ইসলাম এবং মো. জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে এ সচেতনতা অভিযান পরিচালিত হয়।
এ সময় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিকটস্থ বিবেকানন্দ বিদ্যানিকেতন স্কুলসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলার উপজেলা পর্যায়েও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে যেতে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে।