ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নিজেরাই ইনট্রান্সপারেন্ট : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, “করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন : অন্তর্ভূক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাত সংক্রান্ত যে রিপোর্ট টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) করেছে তা ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও জনমনে বিভ্রান্তিকর তথ্যবহুল।”
মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আজ সোমবার দুপুরে সম্প্রতি টিআইবির স্বাস্থ্যখাত সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। টিআইবি জরিপ প্রসঙ্গে প্রথমেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনার সবশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেদনটি পড়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকেই ইনট্রান্সপারেন্ট মনে হয়েছে। স্বাস্থ্যখাত টিআইবির এই প্রতিবেদন টোটালি প্রত্যাখান করছে। যেখানে চাহিদা অনুযায়ী একটি দেশের ৭০ ভাগ মানুষের টিকার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৭৫ ভাগ জনসংখ্যাকে অর্থাৎ প্রায় ১৩ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। বুস্টার ডোজই দেওয়া হয়েছে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষকে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘টিআইবি রিপোর্টে জরিপ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৮০০ মানুষকে নিয়ে। স্বাস্থ্যখাত টিকা দিয়েছে ১৩ কোটি ডোজ। তাহলে কোথায় ১৩ কোটি মানুষ আর কোথায় মাত্র এক হাজার ৮০০ জন মানুষের জরিপের ফলাফল। সেই জরিপও করা হয়েছে ফোনে ফোনে কথা বলে। প্রতিবেদনে টিআইবি একটার পর একটা মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে গেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিআইবি বলেছে দেশের ৭ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ করোনায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। ৭ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ মানে তো দেড় লাখ মানুষ। দেশে করোনায় ৩০ হাজারের কম মানুষ মারা গেছেন অথচ তারা বলছেন ৭ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ মারা গেছেন বিনা চিকিৎসায়। টিকা ব্যবস্থাপনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। আমরা কেবল নিজেদের কেনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছি। এর সঙ্গে সাড়ে ৯ কোটি ডোজ টিকা যেগুলো সরকার বিনামূল্যে পেয়েছে সেগুলোর মূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। কেনা ও উপহার হিসেবে পাওয়া টিকার মূল্য ধরেই ৪০ হাজার কোটি টাকা বলা হয়েছে।’
জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে ৪০ লাখের বেশি ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি টিকা পাননি। এটিও সঠিক তথ্য নয়। দেশে বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি আছে এক কোটি ২০ লাখের মত। সরকার সবার আগে বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকা দিয়েছে। তারপর অন্যান্য মানুষকে দেওয়া হয়েছে। কোথাও ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি টিকা পাননি এমন কথা জানা যায়নি। এর মধ্যে যারা নেননি তারা ইচ্ছে করেই নেননি। তবে টিকাদানে সরকারের সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি ছিল না। টিকাদানে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে কোনো কোনো জায়গায় ৬৬ থেকে ৬৭ টাকা করে ঘুষ দিয়ে টিকা নিতে হয়েছে। ৬৬ থেকে ৬৭ টাকা আজকাল কাউকে এমনি এমনি দিলেও নিতে চায় না। অথচ এটি প্রচার করা হলো দুর্নীতি হিসেবে। ল্যাব সংখ্যা কম, চিকিৎসা সেবা পায়নি মানুষ। অক্সিজেন ঘাটতি ছিল, আরও নানা বিষয়ে জরিপে বলা হয়েছে যার কোনোটিই সত্যি নয়। দেশে কোথাও অক্সিজেন ঘাটতি হয়নি। আমেরিকার রেমডিসিভির ওষুধ সবার আগে বাংলাদেশে চলে এসেছে, সেটিও সরকার বিনামূল্যে দিয়েছে। এরপরও টিআইবি বলছে দেশে ওষুধের ঘাটতি ছিল। মূলত টিআইবি স্বাস্থ্যখাতের অর্জনকে ম্লান করে দিতেই এই রিপোর্ট করেছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যখন দেশে বিদেশে সবাই প্রশংসা করছে, তখন তারা এরকম মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি পড়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকেই ইনট্রান্সপারেন্ট মনে হয়েছে। স্বাস্থ্যখাত টিআইবির এই প্রতিবেদন টোটালি প্রত্যাখান করছে।’
ব্রিফিংকালে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।