ট্র্যাকিং সিস্টেমে সহজেই মামলার তথ্য জানা যাবে : আইনমন্ত্রী
ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুততম সময়ে ও স্বচ্ছতার সাথে মামলার সেবা প্রদানে অনলাইন কেস ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে মামলার সেবা প্রদানে অনলাইন কেস ট্র্যাকিং সিস্টেম চালুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ রোববার (৫ মার্চ) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে তাদের মামলা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি অফিসসমূহ তাদের মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকে না। এই কেস ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে তারা সহজেই মামলার হালনাগাদ তথ্য জানতে পারবে। এতে করে দ্রুততম সময়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসসমূহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। ফলে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলায় সরকারি স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব হবে।
মন্ত্রী বলেন, আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের সাথে সরকারের অন্য দপ্তরের সংযোগের মাধ্যমে একটি আস্থার সম্পর্ক স্থাপিত হবে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ অনেকাংশে সহায়ক হবে।
আজ রোববার সকালে ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত অনলাইন কেস ট্র্যাকিং সিস্টেম ‘সলট্র্যাক http://soltrack.gov.bd’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) একেএম কামাল উদ্দিন এই কেস ট্র্যাকিং সিস্টেম উদ্ভাবন করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বস্তরে আইনের শাসন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা ছিল বঙ্গবন্ধুর অন্যতম স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সেই লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন করে চলেছেন।
আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষণার সাথে সাথে ৪টি ভিত্তি নির্ধারণ করে দিয়েছেন- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। প্রত্যেকটি কম্পোনেন্ট একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কিত। মূলত প্রযুক্তিনির্ভর নির্মল ও স্বচ্ছ তথা নাগরিক হয়রানিবিহীন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ এবং ভোগান্তি ছাড়া প্রত্যেক নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমেই একটি স্মার্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সকল সেক্টরে প্রযুক্তি নির্ভর সেবা প্রদানের পদক্ষেপ হিসেবে স্মার্ট জুডিসিয়ারি প্রতিষ্ঠাও সরকারের একটি অগ্রগণ্য কাজ। সে লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কারণেই সারা দেশে বিচার বিভাগকে প্রযুক্তিবান্ধব করার জন্য ‘ই-জুডিসিয়ারি’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি খুব শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে। আইনমন্ত্রী বলেন, দেশের ভূমি নিবন্ধনে জনবান্ধব ‘ই-রেজিস্ট্রেশন’ কার্যক্রম গ্রহণ এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সাথে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের আন্তঃসংযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসকে স্ব স্ব প্রশাসনিক এখতিয়ারের মধ্যে রেখে ইতোমধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১০ জুন হতে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উক্ত ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মোট চৌষট্টি হাজার পাঁচশত বিরাশিটি দলিল ই-রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে। দেশের অবশিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসমূহকে একইভাবে ই-রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া, সারা দেশের বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রমকে ডিজিটাইজড করার জন্য আইন ও বিচার বিভাগ একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার মাধ্যমে প্রত্যেক নিকাহ্ রেজিস্ট্রার বিবাহ নিবন্ধনের যাবতীয় তথ্য অনলাইনে ইনপুট দিবেন এবং পক্ষগণ কাবিননামাসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। এই অনলাইন পোর্টালে প্রকৃত নিকাহ্ রেজিস্ট্রারদের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ফলে বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারি মামলাগুলো ঠিকমতো উপস্থাপন করা হলে বেশির ভাগ মামলায় সরকার জিতে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ঠিক উল্টো। বেশিরভাগ মামলায় সরকার পক্ষ হেরে যায়। হেরে যাওয়ার পর সরকার পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। তখন দৌঁড়ঝাপ শুরু হয় এবং একে অপরকে দোষারোপ করা হয়। আইন ও বিচার বিভাগ উদ্ভাবিত এই সফটওয়্যারটি একে অপরকে দোষারোপ করার কালচার থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুযোগ তৈরি করবে।