ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : ছয় বিদেশিসহ ১০ জন রিমান্ডে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় পার্সেল প্রতারকচক্রের ১০ জনের দুদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুল হক এই আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন-সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪)। এছাড়া নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি (৪০), ইমানুয়েল (২৬), জন (৩১), অ্যাঙ্গোলিয়ান নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ (৩৫), ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনি (৩২।
এ মামলার প্রধান আসামি বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্কর (৩৪) অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় তাকে আজ আদালতে হাজির করা হয়নি।
গত মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, ২৮টি মুঠোফোন, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, ১ হাজার ৪১৫টি চেকের পাতা, একটি প্রাইভেটকার, ৩ লাখ ৫০ হাজার জাল টাকা, ১১ লাখ ৩৫ হাজার নগদ টাকা, প্রতারণা সম্পর্কিত কথোপকথনের অসংখ্য স্ক্রিনশট ও বিভিন্ন মুঠোফোন অপারেটরের ২৬৩টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মিরপুর স্টেডিয়ামের গেটের সামনে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা তোলার জন্য কিছু সদস্য একত্রিত হয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তারা মূলত দেশি-বিদেশি প্রতারকচক্রের সক্রিয় সদস্য।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন শহরের সাধারণ মানুষের হোয়াটঅ্যাপ নম্বর, ই-মেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করে ফেসবুকে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ বিভিন্ন পরিচয় ধারণ করে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। পরবর্তীতে প্রতারকরা দামি উপহার, স্বর্ণালংকার ও বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা/ডলার/ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে লোভনীয় ছবি পাঠায়। পরে পার্সেল পাঠানোর নামে ভুয়া পার্সেল ও রিসিটের ছবি পাঠায়।
হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকে। প্রতারকচক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি প্রতারকরা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর নম্বর হতে প্রতারিত ব্যক্তিকে কল দিয়ে নিজেকে কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানায় যে, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে। কাস্টমস হাউজ থেকে তা ছাড় করতে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে।
‘প্রতারকরা টাকা পরিশোধের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ম্যাসেজের মাধ্যমে প্রতারিত ব্যক্তিকে পাঠায়। প্রতারিত ব্যক্তি বিদেশি বন্ধুর থেকে পাঠানো পার্সেল পাওয়ার আশায় কলিং বিভাগের কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোন করা বাংলাদেশি প্রতারকের দাবিকৃত টাকা ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠানো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিশোধের পর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী প্রতারক পুনরায় ফোন করে জানায় যে, তার বিদেশি বন্ধু কর্তৃক প্রেরিত পার্সেলে অবৈধ মালামাল রয়েছে। তাই পার্সেল ছাড়াতে আরও বেশি অংকের টাকা প্রয়োজন।
ডিবি প্রধান বলেন, এ টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে বলে মিথ্যা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। প্রতারিত ব্যক্তি মামলার ভয়ে প্রতারকের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দাবিকৃত টাকা পুনরায় পাঠালে ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরও বড় অংকের টাকা দাবি করে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। প্রতারকরা তাদের দাবিকৃত টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ভুক্তভোগীদের ব্লক করে দেওয়া হয়।