‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে দেশের মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সব মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। ডিজিটাল বিষয়টা ১০ থেকে ১৫ বছর আগে ছিল না, সুতরাং ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে যখন একজন সাংবাদিকের চরিত্র হনন করা হয়, একজন গৃহিণীকে যখন অপবাদ দেওয়া হয়, একজন সাধারণ মানুষ যখন ডিজিটাল আক্রমণের শিকার হন, তিনি কোন আইনে প্রতিকার পাবেন? তখন কোন আইনের বলে তিনি নিরাপত্তা পাবেন? সেজন্য একটা আইনের দরকার। এই জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুরপাড়ের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন। তখন সমসাময়িক অনেক বিষয়েই কথা বলেন তিনি।
মুশতাক আহমেদের মৃত্যু সত্যিই অনভিপ্রেত জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, সেটা খুঁজে দেখা যেতে পারে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার যাতে না হয় সেটির জন্য আমরা সচেতন আছি। বিশেষত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাতে এই আইনের অপব্যবহার না হয়, সেজন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় সচেতন আছি এবং কোনোখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কবর দেওয়া উচিত ডা. জাফরুল্লাহর এমন বক্ত্যব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ তো নানা কথা বলেন। যেমন করোনার টিকার বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার ছিলেন। আবার নিজে করোনার টিকা নিয়ে বলেছেন এই টিকা সবার নেওয়া উচিত। সুতরাং আজকে জাফরুল্লাহ সাহেব যে কথা বলেছেন, দুদিন পর দেখবেন তিনি আবার অন্য সুরে কথা বলছেন। সুতরাং এটার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
বিডিআর বিদ্রোহ প্রসঙ্গে
এ সময় বিডিআর বিদ্রোহের প্রসঙ্গ এনে বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিনে খালেদা জিয়া কেন প্রত্যুষে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে চলে গিয়েছিলেন? সেদিন কেন তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ বার কথা বললেন? এই রহস্যগুলো বের হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তাহলেই মুখোশ উন্মোচিত হবে, কারা এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছিল।’
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ নানা ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও কারা কারা আছে সেগুলো নিয়ে তারা ক্ষমতায় গেলে তদন্ত করবেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তখন সদ্য সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। আমাদের সরকারের তখনও দুই মাস পূর্তি হয়নি। প্রায় দেড় মাসের মাথায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড সংগঠনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে অস্থিতিশীল করা।’
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে নয় শুধু, পৃথিবীর অন্য দেশের নিরিখেও এত বড় একটি হত্যাকাণ্ডের এতগুলো আসামির বিচার কম হয়েছে। আমাদের দেশের ইতিহাসে এতজন আসামির বিচার আর হয়নি। বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও এতগুলো আসামির বিচার কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
‘বিএনপিকে বাস্তবতা মানতে হবে’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের মামলার বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে মামলা যে কেউ করতে পারে। মামলা করার অধিকার সবারই আছে। তবে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে বিএনপিকে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডা. শাহাদাতকে আমি অনুরোধ জানাব, তাঁর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্ন রাখার জন্য। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুস্থ সবল থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ চট্টগ্রামে আসলেন না কেন? এমনকি চট্টগ্রামে যেসব কেন্দ্রীয় নেতারা আছেন তাঁরাও কিন্তু নির্বাচনের সময় তাঁর পক্ষে নামেননি। আমির খসরু মাহমুদকে দুয়েকবার দেখা গেলেও তা সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁর দলের স্থানীয় নেতারাও প্রথমে কিছুটা সরব থাকলেও পরে তাঁরা ঘরের মধ্যে চলে যান। এজন্য ডা. শাহাদাতকে বলব, এই প্রশ্নগুলো তাঁর দলের নেতাদের কাছে করে তাঁদের বিরুদ্ধেই যাতে একটা মামলা করেন।’