ডুমুরিয়ায় মেম্বার নির্বাচিত হলেন তৃতীয় লিঙ্গের শাহিদা
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার পর জনসেবায় এগিয়ে এসেছেন তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া সম্প্রদায়। নারী পুরুষের পাশাপাশি তারাও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন। তারই জলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা ইউনিয়নে নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শাহিদা (৪২) বিবি। শাহিদা ওই ইউনিয়নের ৪ ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন।
শাহিদা খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বেতাগ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা আ. রাজ্জাক মোড়ল চুকনগরে বসবাস করেন। তিনি বেতাগ্রামে নিজের বাড়িতে থাকেন। অনেকে তাকে শাহিদা বা শহিদ বলেও ডাকেন। গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাগুরাঘোনা ইউনিয়নে ৪ ৫ ও ৬ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চারজনের সঙ্গে মাইক প্রতীক নিয়ে লড়াই করে দুই হাজার ৭৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাইলা বেগম পেয়েছেন এক হাজার ৭১৪ ভোট।
শাহিদা বেগম হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করাসহ গরিব, অসহায় বঞ্চিত লোকদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আমি জয়লাভ করেছি। সেবা করার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। আমার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কখনও আমি কোনো মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করিনি। এ জন্য জনগণ আমাকে যথার্থ মূল্য দিয়েছেন। সংরক্ষিত তিনটি ওয়ার্ডে তৃতীয় লিঙ্গের আর একজন ভোটার ছিল মুক্তা মনি। যেসব সময় আমার নির্বাচনের কাজে সহযোগিতা করেছে। তার প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
শাহিদা হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে মানুষের ধারণা বদলে দিতে চান। সমাজে অবহেলিত হওয়া সত্ত্বেও জনগণ তাকে নির্বাচিত করে সমাজে স্থান দিয়েছেন। তাই এলাকার সব ভোটারদের কাছে তিনি ঋণী। ভোটের দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭ থেকে ৮ জন হিজড়া এসে অনেক সহযোগিতা করার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে হিজড়াদের সর্বপ্রথম ভোটাধিকার দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া সংক্রান্ত নীতিমালা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পায়। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ভোটার তালিকায় নারী ও পুরুষের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়।