ডেসটিনির সম্পদ বণ্টন : কমিটি গঠনের রায় বহাল
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন সংক্রান্ত নিম্ন আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণ বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত। এ আদেশের ফলে কমিটি গঠনের কাজ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আজ বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। ডেসটিনির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এম কে রহমান।
গত সপ্তাহে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনে নিম্ন আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রাখলেন চেম্বার আদালত।
গত ১২ মে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে সরকারকে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের জন্য রায়ের পর্যবেক্ষণ দেন ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।
রায়ে চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকার মানি লন্ডারিং আইনের এক মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনসহ ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ তার শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের অন্তর্গত। তাদের টাকা উদ্ধারই এই মামলার আসল চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বা অর্থ ডেসটিনির শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ বলে গণ্য হবে।
এই মামলার ক্ষেত্রে সমস্ত ধরণের জরিমানা এবং সম্পত্তি বা অর্থ বাজেয়াপ্ত করা, ডেসটিনির শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে বিবেচিত হবে এবং সরকার কর্তৃক গঠিত একটি কমিটির দ্বারা বিতরণ করা উচিত। ডেসটিনির ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত উপায়ে অর্থ বিতরণ করার জন্য, সরকারকে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ের পর্যবেক্ষণে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়, সমবায় মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে সদস্য, পাশাপাশি একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও কো-অপারেটিভ বিভাগের নিবন্ধককে সদস্য হিসেবে রাখার কথা বলেন বিচারক।
পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, ‘বাজেয়াপ্তকৃত মোট এবং স্থাবর সম্পত্তি আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিক্রি করার জন্য কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়া হবে এবং এর পরিমাণ কমিটির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। সব অর্থ জমা থাকবে এবং তারপরে বাজেয়াপ্ত করা ব্যাংক হিসাবগুলোর সঙ্গে রাখা সমস্ত পরিমাণের ব্যাংক হিসাবে জমা করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী অ্যাকাউন্টে নগদ ব্যালেন্সসহ ব্যাংক-অ্যাকাউন্টের আয় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এসব অর্থ ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের সম্পদ বিতরণ কমিটির দ্বারা তাদের সরবরাহ করা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হবে।’
পর্যবেক্ষণে বলা হয় ডেসটিনির ব্যাংক এবং অন্যান্য সম্পদের কাছে রাখা সম্পত্তি/পরিমাণ, ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, আর ডেসটিনির অন্তর্গত নয় এবং লিকুইডেটর দ্বারা এর সম্পদ মূল্যায়নের জন্য বাদ দেওয়া হবে। ডেসটিনির ব্যাংকে থাকা উদ্বৃত্ত সম্পদ/পরিমাণগুলো কমিটির কাছে হস্তান্তর করা উচিত এবং কমিটি বিচক্ষণতা ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করে ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থ প্রদান করে সমস্ত তহবিল সংগ্রহ করবে।
সরকার কমিটির সদস্যদের জন্য একটি সম্মানি নির্ধারণ করবে এবং সম্মানী ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ বিতরণ কমিটির অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া হবে বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়।