ড্যাবের দাবি, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি দুর্বল
বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) দাবি, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি খুবই দুর্বল।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘করোনাভাইরাস : বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি’ শীর্ষক কর্মশালা ও সংবাদ সম্মেলনে ওই মন্তব্য করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবদুস সালাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় ১০৯টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সরকারিভাবে তিনজন রোগী শনাক্তের পর চিকিৎসাধীন আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই ভয়াবহ ভাইরাসের আক্রমণ মোকাবিলায় সামান্য কিছু আশ্বাস ছাড়া কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয়নি। এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল কোনো মহল থেকেও সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কোনো প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়নি।’
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি, মাত্র কয়েকদিন আগে বিমানবন্দরে বসানো স্ক্যানার মেশিনগুলো এখন আর কাজ করছে না। এ পরিস্থিতিতে দেশের বাইরে থেকে আগত ব্যক্তিদের পরীক্ষা কীভাবে করা হচ্ছে বা আদৌ কার্যকরভাবে কোনো পরীক্ষা হচ্ছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। আর এই বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করা না গেলে এ দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুতেই ঠেকানো যাবে না। দ্বিতীয়ত, যেহেতু ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, তা দিনে দিনে বাড়তে থাকবে। এটি মোকাবিলায় মূলত দুটি পথ আমাদের সামনে খোলা রয়েছে। তা হলো, আক্রান্ত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং দেশের অভ্যন্তরে এই ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ করা।’
ড্যাবের মহাসচিব বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতা জারি ও মহামারি ঘোষণা করেছে, সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশ যখন তাদের নাগরিকদের এই প্রাণঘাতী ব্যাধি থেকে বাঁচাতে রাষ্ট্রের সর্বশক্তি নিয়োগ করছে, ঠিক তখন আমাদের দেশ এই ভাইরাসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকার পরও এর মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের শিথিলতা আমাদের অত্যন্ত আশাহত ও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’
মূল প্রবন্ধকার অধ্যাপক ডা. আমিনুল হক জানান, ‘মূলত ২০০৩ সাল থেকেই করোনা ভাইরাসটি শুরু। তবে শুরুতে এত সংক্রমণ ঘটেনি। এটা একটা পরিবারের মতো। যার সাইজ ১২০-১৬০ ন্যানো মিটার। যাকে আরএনএ ভাইরাসও বলা হয়। গলা শুকনা থাকলে ভাইরাস ঢুকে যাবে। মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটলে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমণ ঘটবে। বলা হচ্ছে প্যাংগোলিন বা বনরুইয়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। তবে এটি এখনো কেউ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেনি। করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করতে এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত সেটা এখনো অস্পষ্ট। কেননা এই ভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই। তবে রোগীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। করোনা প্রতিরোধে যত নির্দেশনা আছে সেগুলো মেনে চলতে হবে। ভীত হওয়া, গুজবে কান দেওয়া যাবে না।’
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবদুস সালামের পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিনুল হক। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. মো. আবদুস সেলিম, কোষাধ্যক্ষ ডা. শাকিল, যুগ্ম সম্পাদক ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ড্যাব নেতা ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী।