ড্রোন দিয়ে ডেঙ্গু মশা খুঁজছে ডিএনসিসি
রাজধানীর বাড়ির ছাদগুলোতে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়াসহ মশার উৎস খুঁজতে ড্রোন ব্যবহার করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মশক নিধনে অভিযান পরিচালনা করছেন। ড্রোন হাতে দুজন অপারেটর রয়েছে।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানের ৭৪ নম্বর রোডের ৫ নম্বর ভবনটি হোটেল প্যারাডাইজে ১৪তলার ছাদে সকাল ১০টার দিকে হেলিপ্যাডে গুলশানের আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, আমাদের মশক নিধন কর্মীদের যদি বলি তোমরা ছাদে উঠে মশার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করো, তাহলে তারা দুই, চার বা সর্বোচ্চ ১০টি বাড়ি দেখবে। আবার অনেক বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। কিন্তু একটি উঁচু ভবনে যখন আমরা উঠে ড্রোন দিয়ে দেখছি, তখন আশপাশের শত শত বাড়ি কিন্তু আমরা একঘণ্টার মধ্যে দেখে ফেলতে পারছি। এতে করে যেমন কাজ সহজ হয়েছে, তেমনি দ্রুততার সাথে মশার উৎপত্তিস্থলও কিন্তু আমরা চিহ্নিত করে ফেলছি। সেই সঙ্গে তাৎক্ষণিক সেই ভবনে গিয়ে আমরা মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি। মূলত এই কারণেই আমরা মশক নিধন কার্যক্রম বেগবান করতেই আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন ড্রোন নিয়ে একেকটি ভবনে যাচ্ছি, আশপাশের শত শত ভবনের ছাদ দেখছি, তখন অন্য ভবন মালিকরাও কিন্তু সচেতন হয়ে যাচ্ছে। অভিযানে দণ্ডিত যেন তারা না হয়, সে কারণে নিজেরাই তাদের ভবনের ছাদ পরিষ্কার রাখছে। মূলত এটাই আমাদের দরকার, সবাই সচেতন হলে মশক নিধন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া থেকে আমরা নগরবাসীকে রক্ষা করতে পারব।
গত বৃহস্পতিবার উত্তরা সেক্টর-৪ এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎস শনাক্তকরণ কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ২ থেকে ১১ জুলাই ঢাকা উত্তরের আওতাধীন প্রতিটি বাসা-বাড়িতে অত্যাধুনিক ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎস খুঁজতে আমরা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করব। সিটি করপোরেশন ড্রোন থেকে ছবি নিয়ে এবং তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তার একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবে, যা আগামী বছরও মশক নিধন কার্যক্রমে কাজে লাগবে।
সে সময় তিনি আরও বলেন, নগরের প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশ করে ছাদ বা বেলকনিতে মশার উৎস খুঁজে বের করা কঠিন এবং এটি অনেক সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহার করে প্রতিটি বাড়ির ছাদে এডিসের লার্ভা আছে কি না, তা খুঁজে বের করা হবে এবং পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বছরের মার্চে ঢাকার মশা মারতে ড্রোনের ব্যবহারের পরীক্ষামূলক উদ্যোগ প্রথমবারের মতো নিয়েছিল ডিএনসিসি। সেবার রাজধানীর বনানী লেকে একটি ড্রোন ব্যবহার করে মশার ওষুধ ছেটানোর জন্য পরীক্ষামূলকভাবে একটি কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। মশা মারার ওষুধ ছেটানো নিয়ে এর আগে তারা ড্রোন ডেভেলপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সব কিছু জেনে ডেভেলপার পরীক্ষামূলকভাবে একটি ড্রোন তৈরি করে দেয়। এটি এক ব্যাটারির মাধ্যমে ২৫ মিনিট আর দুই ব্যাটারির মাধ্যমে ৫০ মিনিট শূন্যে উড়তে পারত। পাশাপাশি প্রতি মিনিটে ড্রোনটি ছেটাতে পারবে ৫ লিটার মশার ওষুধ। প্রাথমিকভাবে এটি ২০ লিটার ওষুধ বহন করতে সক্ষম ছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সফল হলে বিশেষ ড্রোনটি ডিএনসিসির জলাশয়, খাল বা লেকে মশা মারতে ব্যবহার করার কথা ছিল। পরে অবশ্য সেই কার্যক্রম আর সামনের দিকে এগোয়নি।
তবে আজ থেকে নতুন পদ্ধতিতে ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎস শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু করেছে ডিএনসিসি। আজ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা উত্তরের আওতাধীন প্রতিটি বাসা-বাড়িতে অত্যাধুনিক ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎস খুঁজতে এই চিরুনি অভিযান পরিচালনা করবে নগরের সেবা দেওয়া এই সংস্থাটি।