তরমুজের ভালো ফলন হলেও কৃষকের হাসি কেড়ে নিচ্ছে দালালরা
ভোলার আবহাওয়া ও মাটি অনুকূল থাকায় চলতি বছরে বিপুল তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। তবে কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিচ্ছে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী দালাল। তাদের প্রতিটি তরমুজের বিপরীতে দিতে হচ্ছে ৭ থেকে ১০ টাকা। এদের কারণে সরাসরি বেপারিদের কাছে বিক্রি কিংবা মোকামে তরমুজ পাঠাতে পারছেন না কৃষকরা।
দ্বীপজেলা ভোলা তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। যে কারণে গত বছর বেশ ভালো ফলন আর দাম পেয়েছেন কৃষকরা। গত বছর লাভবান হয়ে কৃষকরা চলতি বছর আরও বেশি জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করেছেন। গত বছরের চেয়ে এবার সাত হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে্। চলতি মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২ টন করে। আর মোট তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭৬ টন।
বর্তমানে কৃষকদের মুখে হাসি থাকার কথা থাকলেও প্রভাবশালী দালাল কারণে রয়েছে চরম ক্ষোভ। একটি তরমুজের পেছনে ৭০ থেকে ৮০ টাকা খরচ থাকলেও মাঠে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে। আর স্থানীয় প্রভাবশালী দালালদের দিতে হচ্ছে ৭ থেকে ১০ টাকা করে। নিজের ফসল নিজে বিক্রি কিংবা গাড়িতে তুলে দিতে পারছেন না কৃষকরা। সবই দালালদের মাধ্যমেই দিতে হচ্ছে বলে প্রতারণার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অসহায় কৃষকরা।
জেলার চরফ্যাশন উপজেলার চরকলমী ইউনিয়নের একাধিক তরমুজের ক্ষেতে গেলে একই ধরনের সমস্যার কথা বলেন তরমুজ চাষিরা। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. রফিকুল ইসলাম, মো. বেল্লাল হোসেন ও মো. শরীফ বলেন, ‘রোদে পুড়ে চাষাবাদ করি। লোন আর ধার-দেনা করে ফসলাদি ফলাই একটু আয় করবে বলে। অথচ স্থানীয় নেতা আর প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা দালালী করে. এদের জন্য পারছি না। আমার ফল আমি ক্ষেত থেকে কেটে মাথায় করে ট্রাকে পৌছে দিব এবং ২/৪ টাকা লাভবান হব। অথচ তা পারছি না,কারণ এসব দালালকে দিতে হবে। আমার তরমুজ আমি দাম দিতে পারি না, এরা এসে দাম ধরে বিক্রি করছে। লেবার তারা দিবে। আমাদের উপর জুলুম করছে এই স্থানীয় নেতাফেতারা। চাষাবাদ করি আমরা আর এরা এসে ফাও টাকা নিয়ে যায়। আমাদের তরমুজ সরাসরি বেপারির কাছে আমরা বিক্রি করব এবং ক্ষেতেই টাকা যাতে পাই—এ জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।’
এদিকে তরমুজের ক্ষেতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলছি দেখে ছুটে আসেন স্থানীয় প্রভাবশালী (দালাল ) চর কলমী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মো. আবুল বাশার বাচ্চু এবং একই ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা বলেন, ‘কৃষকরা সরাসরি বিক্রি করছে না। গাড়ির চালক কিংবা বেপারিরা কৃষকদের বিশ্বাস করছে না বলেই আমরা সহযোগিতা করছি। তাতে আমরাও লাভবান হচ্ছি। ক্ষেত থেকে আমাদের লোক দিয়ে ট্রলার কিংবা ট্রাকে তুলে দিচ্ছি। তাতে তরমুজ প্রতি সাত-আট টাকা দিচ্ছে আমাদের।’
দালালরা অসহায় মানুষদের প্রতারণা করে কৃষকদের কাছ থেকে লোড-আনলোডের নামেও টাকা আদায় করছে বলে স্বীকার করে নিলেন স্থানীয় এই দালালরা।
অপরদিকে বাম্পার ফলনের কথা জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এফ এম শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘তরমুজের ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হয়েছে, তবে এ জন্য কৃষকদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া সাড়ে নয় লাখ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে জেলায়।’
তবে পরিবহণ ব্যবস্থা এবং প্রতারণা না হলে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।