তৃতীয় লিঙ্গের পলাশ এখন সফল উদ্যোক্তা
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) উদ্যোক্তা মেলায় স্টল বসিয়েছেন পলাশ। তার স্টলে রয়েছে ব্যতিক্রমী সব আকর্ষনীয় পণ্য। সব বয়সের মানুষ তার পণ্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন। অনায়াসে কিনছেন তার স্টলের হাতে তৈরি আয়না, ঝাড়বাতি, কাঠের গহনাসহ বিভিন্ন পণ্য। প্রতিদিন তিনি গড়ে ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করছেন এ মেলায়।
পালাশ দেশের থার্ড জেন্ডার জনগোষ্ঠীর মধ্যে একমাত্র বস্তু ও ধাতব কৌশল (এমএমই) উদ্যোক্তা। তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২ বার ও জাতীয় পর্যায়ে ৩ বার পুস্কার পেয়েছেন। তার উৎপাদিত পণ্য নিয়মিত নেপাল যাচ্ছে। এ ছাড়া পুনাক ও আড়ং-এ পলাশের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। পলাশ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি ২য় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্কে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা শুরু হয়েছে। এ মেলা আজ শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত চলবে।
পলাশ বলেন, ভারতের রাজস্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি এমএমই উদ্যোক্তা হয়েছি। ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া শহরের থার্ড জেন্ডারের কয়েক জনকে সংগঠিত করে বেবি হ্যান্ডিক্রাফট প্রতিষ্ঠা করি। ভারত থেকে কাঁচামাল আনি। সেইগুলোর সাথে বাংলাদেশি বিভিন্ন কাঁচামালের সংমিশ্রণে ঝলমলে সব পণ্য তৈরি করি। আমার পণ্য আনকমন তাই চাহিদা বেশি। এখন আমার এ প্রতিষ্ঠানে থার্ড জেন্ডারের ৪৪ জন কাজ করছেন। আমি প্রতিদিনের বেতন প্রতিদিন তাদের প্রদান করছি। তারা এখানে কাজ করে এখন বেশ ভালো আছে। জীবন জীবিকার জন্য তাদের এখন আর কারো কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। তারা আত্মমর্যাদা নিয়ে সমাজে বসবাস করছে। তারা এখন আত্মপ্রত্যয়ী।
পলাশ বলেন, আমি সারাদেশের থার্ড জেন্ডারের জনগাষ্ঠেীর হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে চাই। সেই লক্ষ্যেই আমি কাজ শুরু করেছি। এদের মধ্যে থেকে উদ্যোক্তা ও ভালো কর্মী আমি সৃষ্টি করতে চাই। আমি গোপালগঞ্জে থার্ড জেন্ডারের জনগোষ্ঠীর সাথে কথা বলেছি। তারা উদ্যোক্তা ও কর্মী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া বরিশাল, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার থার্ড জেন্ডারের মানুষের সাথে মতবিনিময় করেছি। তারা উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমি তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা ও কর্মী তৈরি করতে চাই।
পলাশ আরো বলেন, এ ব্যাপারে বিসিক আমাদের এ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করলে তাঁরা আর পিছিয়ে থাকবে না। তারা নিজেদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিনত করতে পারবে। পরের ওপর তারা নির্ভরশীল থাকবে না। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা ভূমিকা রাখবে।
বিসিক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের এজিএম গৌরব দাস বলেন, পলাশ থার্ড জেন্ডারের একজন সফল উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য গোপালগঞ্জ বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তার পণ্য খুবই আকর্ষণীয়। তাই তার স্টলে বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি। তিনি থার্ড জেন্ডার জনগোষ্টীর মধ্যে একমাত্র এমএমই উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা হয়ে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি সারাদেশের থার্ড জেন্ডারের জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে জন্য কাজ করতে চাইছে। আমরা তার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বিসিকের পক্ষ থেকে তাকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। আমি এ উদ্যোক্তার সাফল্য কামনা করছি।
গোপালগঞ্জ বিসিক উদ্যোক্তা মেলার দর্শনার্থী গৃহবধূ খাদিজা পারভীন বলেন, পলাশের স্টলের সব পণ্য খুবই চমৎকার। প্রথম দর্শনেই পছন্দ হয়। দামও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। এ জন্য তার স্টলে কেনা-বেচা বেশি। ভিড় লেগেই থাকছে। আমিও তার কাছ থেকে মনোরম ডিজাইনের কাঠের গহনা কিনেছি।
মেলার দর্শনার্থী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মাঝিগাতী দশপল্লী নেছার উদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসাদ কুমার মৃধা বলেন, পলাশ থার্ড জেন্ডার জনগোষ্ঠীর আইকন হতে পারেন। তার মধ্যে সৃষ্টিশীলতা রয়েছে। এটি কাজে লাগিয়ে তিনি পিছিয়ে পড়া ওই জনগোষ্ঠীক উন্নয়নের মূলধারায় ফেরাতে পারেন। আর এটি করতে পারলে ওই জনগোষ্ঠী আর অবহেলিত থাকবে না। তারাও দেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবেন।