দর্শক ও টেলিভিশনের সুবিধায় ডিজিটাল পদ্ধতি : তথ্যমন্ত্রী
দেশে টিভি কেবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল হলে টেলিভিশনের দর্শক, মালিক, কেবল অপারেটরসহ সবাই উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে পূর্বঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এবং গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ সব আদি জেলা শহরে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে টিভি কেবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপায়ণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
আজ রোববার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-অ্যাটকো এবং কেবল ডিস্ট্রিবিউটর ও অপারেটরদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনের পরিচালনায় অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সহসভাপতি আরিফ হোসেন, সদস্য আব্দুস সামাদ বাবু, আহমেদ জোবায়ের, হুমায়ুন কবীর বাবলু, ডিস্ট্রিবিউটর প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবুল খায়ের চৌধুরী, অপারেটর প্রতিনিধি এস এম আনোয়ার পারভেজ, সৈয়দ মোশারফ আলী, এ বি এম সাইফুল হোসেন, মো. ফখরুদ্দিন মিয়া, মো. এনামুল হাফিজ ছোটন প্রমুখ সভায় অংশ নেন।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজান-উল-আলম, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার) খাদিজা বেগম, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী এ সময় বিদেশি চ্যানেলের ক্লিনফিড বাস্তবায়ন এবং কেবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করতে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য কেবল অপারেটরদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশে ক্লিনফিড চালু করার ক্ষেত্রে যেভাবে তারা সহায়তা করেছেন সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ। এতে করে দেশ উপকৃত হয়েছে, আমাদের আইন বাস্তবায়িত হয়েছে, একইসঙ্গে সরকার যে রাজস্ব হারাচ্ছিল এবং আমাদের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল সেটির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই কাজটি চূড়ান্ত বাস্তবায়ন করেছে কেবল অপারেটররা।
ড. হাছান বলেন, ‘আমাদের প্রথম সিদ্ধান্ত বিদেশি চ্যানেলের ক্লিনফিড বাস্তবায়িত হয়েছে। অপরাপর সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য আজকের এ বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে এবং গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ সব আদি জেলা শহরে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে টিভি কেবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করার সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’
‘কেবল অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সময় বাড়ানোর প্রয়োজন নেই, তারা এরই মধ্যেই তাদের প্রান্তে ডিজিটাল-হেড স্থাপন করেছেন, এখন গ্রাহকদের সেট-টপ বক্স নিতে হবে’- বলেও জানান সম্প্রচারমন্ত্রী। তিনি বলেন, সময়সীমার মধ্যে উল্লিখিত শহরগুলোতে গ্রাহকদের সেট-টপ বক্স না থাকলে টেলিভিশন দেখার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় হবে। সহজ কিস্তিতে সুলভ মূল্যে কেবল অপারেটরা গ্রাহকদের সেট-টপ বক্স সরবরাহ করবে। অ্যাটকো প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে সব টেলিভিশন চ্যানেলে ব্যাপকভাবে প্রচার চালানো হবে বলে বলেছেন।
আমাদের এই বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের কেবল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম এখনো ডিজিটালাইজ হয়নি বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ভারত ও নেপালে হয়েছে, আমাদের দেশে এটি করলে সবার জন্যই সুবিধা। গ্রাহকরা আরও ভালোভাবে টেলিভিশন দেখতে পাবেন। দ্বিতীয়ত ডিজিটাল না হওয়ার কারণে সরকার প্রতি মাসে ১২৫ থেকে ১৫০ কোটি টাকার ভ্যাট হারাচ্ছে। কেবল অপারেটররাও গ্রাহকদের কাছ থেকে যতখানি পাওয়ার কথা সেটি পায় না। কেবল অপারেটররা যে ফিড অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালনা করে, দেখা যায় তাদের গ্রাহক আছে ১০ হাজার, ফিড অপারেটর হিসাব দিচ্ছে ১ হাজারের। এভাবে তারাও বঞ্চিত হচ্ছে। টেলিভিশনের কর্তৃপক্ষও তাদের দর্শকসংখ্যা জানতে পারছেন না। যখন নেটওয়ার্কিং সিস্টেম ডিজিটাল হবে তখন কোনো চ্যানেল যদি পে-চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, সেটি তখন সহজ হবে। সরকার দেশের অর্থনীতির জন্যও এটি মঙ্গল বয়ে আনবে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, ‘ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য নীতিমালার খসড়া তৈরি হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, তাদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। দেখা যাচ্ছে, যেসব চ্যানেল কেবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্লিনফিড ছাড়া দেখা যাচ্ছে না, সে সব চ্যানেল অনেক ক্ষেত্রে ওটিটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এটিও আইনের বরখেলাপ এবং নীতিমালার আলোকে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’