দিনটি ছিল ‘শূন্য আট-দশের’
ম্যাজিক আইল্যান্ড পার্ক, কেরানীগঞ্জ। প্রবেশপথে সাজানো-গোছানো দুটি ঘোড়ার গাড়ি। পথের মোড়ে উপস্থিত বন্ধু-বান্ধবরা একে একে গাড়িতে চড়ে যাচ্ছিলেন পার্কের প্রবেশদ্বারে। সেখানে তাঁদের জানানো হচ্ছিল টকটকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।
সকাল সাড়ে সাতটা। এ প্রবেশদ্বারের পাশ থেকেই দেওয়া হয় নাস্তা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বন্ধুরা নাস্তা সেরে ঢুকছিলেন পার্কের ভেতর। গল্পের শুরুটা হয় ঠিক এভাবেই। এরপর শুরু হয় আরও নানা গল্পের। যা চলতে থাকে শুক্রবার রাত আটটা পর্যন্ত।
সময়ে সময়ে নাচ-গান, খেলাধুলা, লাফালাফি, হুল্লোড় আর ঢেউ ওঠা পানির সঙ্গে মেতে ওঠার মতো নানান ঘটনার জন্ম হয়। শুধু তাই নয়, বন্ধুদের আড্ডা, ক্লিকে-ক্লিকে দৃশ্য ধারণ আর খুনসুটির গল্পে মোড়ানো একটি দিন ছিল গতকাল শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি)।
এতোক্ষণ যাঁদের কথা বলা হচ্ছিল, তাঁরা ২০০৮ সালে মাধ্যমিক ও ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ‘শূন্য আট-দশ’ ব্যাচের বন্ধু-বান্ধব তাঁরা। কেরানীগঞ্জের ম্যাজিক আইল্যান্ড পার্কে প্রায় এক হাজার বন্ধু সম্পর্কের মানুষ মিলিত হয়েছিলেন আনন্দ যাপনে। পার্কের মধ্যে তাঁদের জন্য নির্ধারিত ছাউনি ছিল। সেখানে ছিল একটি স্টেজও। ছিল নাচ-গানের ব্যবস্থা।
সকাল গড়িয়ে তখন বেলা সোয়া ১১টা। বড় বড় শব্দযন্ত্রে বেজে চলেছে, ‘গ্রামে গঞ্জে পালা গানের মঞ্চে, অন্তরে বন্দরে খবর দিয়ে দে, মাঠে ঘাটে আর শহর তল্লাতে, হাওয়ায় হাওয়ায় ঢেউ তুলে দে’। এই ঢেউ শুধু গানে থেমে ছিল তা নয়; ঢেউ উঠেছিল শূন্য আট-দশ ব্যাচের বন্ধুদের শরীর ও মনে। নাচে-গানে উথালপাথাল ছিল সেখানকার পরিবেশ। মনে হচ্ছিল, শব্দের ভারে মাটি কেঁপে কেঁপে উঠছে।
শরীর থেকে তখনও নাচ-গানের ঢেউ নেমে পারেনি। এমন সময় মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘যারা সুইমিং পুলে নামতে চাও, ওয়াটার পার্কে চলে যাও। বাকিরা খেলার জন্য প্রস্তুত হও।’
এই মিলন মেলায় ছেলেদের জন্য ফুটবল আর মেয়েদের জন্য বালিশ চালাচালি খেলার ব্যবস্থা ছিল।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে একদল চলে যায় ওয়াটার পার্কে। সুইমিং পুলে নেমেই দেখা যায়, শব্দযন্ত্রে উচ্চস্বরে চলছে, ‘লাইলা মে লাইলা’। পানির ঢেউ বাড়ছে। তখন পার্ক কর্তৃপক্ষের এক সুন্দরী তরুণী গানের সঙ্গে সঙ্গে নাছছেন। শুধু নাচছেন তা নয়, নাচাচ্ছিলেন পুলে নামা সবাইকে। বলা চলে, তিনি পুলের নাচানাচি পরিচালনা করছিলেন।
সবাই পানিতে নেমে শরীর ছেড়ে নাচানাচি শুরু করলেন। পানি ছিটাচ্ছিলেন একে অপরের শরীরে। ওয়াটার পার্কে অনেক ওপর থেকে ঝরনা ধারার মতো পানি নিচে পড়ছিল। সেখানে থাকা লোকজন ওপর থেকে পানির সঙ্গে সঙ্গে নিচে নামছিলেন। এভাবে শূন্য আট-দশের প্রায় ২০০ জন দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ওয়াটার পার্কের সামগ্রিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
ওপরের পুরো ঘটনা, দৃশ্য কিংবা চরিত্র সেখানে থেকেই এ প্রতিবেদক দেখেছেন। মাঝেমধ্যে তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের অনুভূতি জেনেছেন।
এ মিলন মেলায় অংশগ্রহণকারীদের দাবি, তাঁরা আনন্দ করতে সেখানে গেছেন। আনন্দে মেতে উঠতে চেষ্টা করছেন। চাকরি, ব্যবসা ও নানামুখী ব্যস্ততার ফাঁকে একদিন তাঁদের নিতান্তই নিজের দিন। দিনটাকে স্মরণ রাখতে তাঁরা সময়ে সময়ে হাত ঘোরান, ভঙ্গি বদল করেন; ফ্রেমবন্দি করেন নানান ধাচের ছবি।
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার জমে ওঠে নাচ-গান আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব। গানের সঙ্গে নাচতে নাচতে সেখানে থাকা ব্যক্তিদের যেন দিকবিদিক অবস্থা। এই যেমন, সেখানে থাকা ফয়সাল আহমেদ ইমন নামের এক ব্যক্তির ম্যানিব্যাগ কখন হারিয়ে যায়, তিনি বুঝতেই পারেননি। এভাবে আনন্দ উল্লাসের মধ্যে দিয়ে সন্ধ্যার শেষ ভাগে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়। এরপর একে একে যাঁর যাঁর নিজ জেলায় ফিরে যান শূন্য আট-দশের শির্ক্ষার্থীরা।
শূন্য আট-দশ ব্যাচের আকাশ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি বলছিলেন, ‘সকালে ঘোড়ার গাড়িতে চড়া থেকে শুরু করে ম্যাজিক আইল্যান্ড পার্কের মধ্যে এক দারুণ পরিবেশ বিরাজ করছিল। বন্ধুদের এ মিলন মেলা যেন আনন্দমেলায় পরিণত হয়েছিল। সারা দেশ থেকে আসা বন্ধুরা একসঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতে এখানে এসেছিল। মেতেছিল, সন্দেহ নেই। টুকটাক অব্যবস্থাপনা ছাড়া সব মিলিয়ে খারাপ হয়নি এ মিলন মেলা।’