দুই ইট চুরির অপবাদে গৃহবধূর চুল কর্তন
মাত্র দুইটি ইট চুরির অপবাদ দিয়ে গৃহবধূ রাশিদা খাতুনের চুল কেটে ফেলেছে প্রতিবেশীরা। তারা তাঁকে একটি খুঁটিতে বেঁধে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে। গত সোমবার সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার কলারোয়া থানায় মামলা হয়েছে।
রাশিদা খাতুন পাকুড়িয়া গ্রামের ভারতপ্রবাসী দিনমজুর ইব্রাহিম গাজীর স্ত্রী।
ভুক্তভোগী রাশিদা খাতুন জানান, গত ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় প্রতিবেশী ভ্যানচালক নেদু গাজী তার হাত ধরে টানাহেঁচড়া করেন। এক পর্যায়ে তাকে টানতে টানতে পার্শ্ববর্তী আফসারদের বাড়ির মধ্যে নিয়ে যান। এ সময় তাকে দুটি ইট চুরির অপবাদ দেওয়া হয়। এ নিয়ে বচসা হলে তারা তাকে ছেড়ে দেয়।
রাশিদা জানান, পরদিন মঙ্গলবার ফের তাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ামাত্র তাকে খুঁটিতে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে আফসার আলী। এ সময় তিনি তার দেহের স্পর্শকাতর স্থানে হাত লাগিয়ে মজা করতে থাকেন। বেঁধে রাখা অবস্থায় বাড়ির মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে পারভিনা খাতুন, সাবিনা খাতুন, আনকুরা বেগম, শামীমা খাতুন ও রহিমা খাতুন। তারা জোর করে তার মাথার চুল কেঁচি দিয়ে কেটে ফেলেন। এ সময় অশোভন ভাষায় গালিগালাজ করে ছেড়ে দেয় তাঁকে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাশিদা বলেন, ‘আমি দারুণভাবে অপমানিত হয়েছি। আমার স্বামী একটানা তিরিশ বছর ধরে ভারতে দিনমজুরি করেন। আমি দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে বাড়িতে থাকি, গরুছাগল পালন ও পরের জমিতে কাজ করে সংসার চালাই। কেউ আমাকে কোনো বদনাম দিতে পারেনি কোনোদিন। আমি আমার ব্যবহারের জন্য একটি বাথরুম তৈরি করছি, অন্য জায়গা থেকে ইট কিনে। অথচ দুটি ইট চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে তারা নির্যাতন করেছে ও চুল কেটে নিয়েছে। আমি কলারোয়া থানায় মামলা দিয়েছি। আমি ওদের বিচার চাই।’
রাশিদা আরও বলেন, ‘আমি এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের কাছে এর বিচার চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে সামনে ইউপি নির্বাচন বলে এখন তিনি কোনো বিচার সালিশ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।’
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবির জানান, রাশিদা খাতুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেয়াড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রইসউদ্দিন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।